পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৯৩
উদ্ধার পর্ব্ব—নবম প্রবাহ

চলিয়া আসিতেছে। তৎক্ষণাৎ তুণীর হইতে তীর বাহির করিয়া সে ধনুকে টঙ্কার দিল। অশ্বারোহীর প্রতি লক্ষ্য করিতেই দেখিল, সে জাতীয় চিহ্নযুক্ত শুভ্র নিশান উড়াইয়া সংবাদবাহীর পরিচয় দিতে দিতে নক্ষত্রবেগে ছুটিয়াছে। অলীদ সামরিক বিধির মস্তকে পদাঘাত করিয়া দূরের বক্ষ লক্ষ্যে শর নিক্ষেপ করিবে, কি উত্তোলিত হস্ত ধনুর্ব্বাণসহ সঙ্কুচিত করিবে, এই চিন্তা করিতে করিতেই দূতবর পর্ব্বত-পার্শ্ব হইতে চক্ষের নিমিষে তাহার শিবিরাভিমুখে চলিয়া গেল। অলীদ চক্ষু ফিরাইয়া কেবল ধাবিত অশ্বের পুচ্ছসঞ্চালন আর নিশানের অগ্রভাগ মাত্র দেখিল।

 কি করিবে! অলীদ এখনও কিছু সাব্যস্ত করিতে পারে নাই। পরিশেষে তাহার হিংসাপূর্ণ হৃদয় স্থির করিল যে, যে কোন কৌশলেই হউক, মোহাম্মদীয়গণকে বিনাশ করাই শ্রেয়ঃ। নিশ্চয়ই মোহাম্মদ হানিফা মদিনায় আসিতেছেন। হানিফার দূতকে গুপ্তভাবে বধ করিলে কে জানিবে? কে জানিবে যে, এ কার্য্য একজন প্রধান সৈন্যাধ্যক্ষ দ্বারা সংঘটিত হইয়াছে? যে শুনিবে, সেই-ই বলিবে, কোন দস্যু কর্ত্তৃক এরূপ বিপরীত কাণ্ড ঘটিয়াছে। এই ভাবিয়া অলীদ পুনরায় আপন আয়ত্তমত ধনুর্ব্বাণ ধারণ করিল। মনে মনে বলিল, “পুনঃ এই পথে আসিলেই একবার দেখিব!” কিন্তু এই বলিতেই বলিতেই তাহার কর্ণে দ্রুতগতি অশ্ব-পদ-প্রতিশব্দ প্রবেশ করিল। চক্ষু ফিরাইয়া দেখিল,—সেই নিশান, সেই দূত। দূতবরের বক্ষ লক্ষ্য করিয়া তীর নিক্ষেপ করিবে,—অলীদের এই উদ্যোগেই দূতবর তাহার লক্ষ্য ছাড়াইয়া বহুদূর সরিয়া পড়িলেন, অলীদের হাতের তীর হাতেই রহিয়া গেল। সে বিশেষ লক্ষ্য করিয়া দেখিল—দূতবর আগন্তুক সৈন্যমধ্যে যাইয়া মিশিলেন। ওত্‌বে অলীদ পর্ব্বত-বিহার পরিত্যাগ করিয়া সহচরগণসহ শিবিরে আসিবার জন্য শিখর হইতে অবরোহণ করিল।

 মোহাম্মদ হানিফার প্রেরিত দূত অলীদ-শিবিরে অল্প সময় মধ্যে যাহা যাহা জানিয়া গিয়াছে, তৎসমুদয় মোহাম্মদ হানিফার গোচর করিয়া বলিল, “বিনা যুদ্ধে মদিনায় যাওয়ার সাধ্য নাই। সৈন্যগণ বীরসাজে সজ্জিত প্রধান সৈাধ্যক্ষ ওত্‌বে অলীদ মহোদয় এক্ষণে শিবিরে নাই।”