পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৩৪৮

মদিনাবাসীরাই প্রকাশ্যভাবে অকপটে গ্রহণ করেন। আর অধিক কি বলিব, মদিনাবাসীর অন্তর সরল ও প্রেমপূর্ণ। আমি এখনই যাত্রা করিব, প্রভাতের প্রতীক্ষায় আর থাকিব না।”

 আজ্ঞামাত্র ঘােররবে ভেরী বাজিতে লাগিল। সৈন্যগণ নিদ্রাসুখ পরিহার করিয়া আতঙ্কে জাগিয়া উঠিল। সাজ সাজ রবে চতুর্দ্দিকে মহা কোলাহল পড়িয়া গেল। সজ্জিত হইবার সময় প্রভাতকালীন উপাসনার জন্য আহ্বান-স্বর সকলের কর্ণকে আনন্দিত করিল। মদীনাবাসীরা প্রথমে ভেরীর শব্দে এবং পরে উপাসনার সুমধুর আহ্বান-স্বরে জাগরিত হইয়া নিয়মিতভাবে উপাসনায় যােগ দিলেন। মােহাম্মদ হানিফা, গাজী রহমান প্রভৃতি সৈন্যাধ্যক্ষগণ এবং সৈন্যগণ সজ্জিতবেশে উপাসনায় দণ্ডায়মান হইয়া একাগ্রচিত্তে উপাসনা সমাধান করিয়া জয়নাল উদ্ধারের জন্য পরমেশ্বরের নিকট প্রার্থনা করিলেন।

 নগরবাসীর মহা ব্যস্ত হইয়া হানিফার চতুর্দ্দিক বেষ্টন করিয়া জোড়করে বলিতে লাগিলেন, “হজরত! গত কল্য আমরা, যে প্রার্থনা করিয়াছিলাম, তাহা বােধ হয় গ্রাহ্য হইল না?” মােহাম্মদ হানিফা বিনয় বচনে বলিলেন, “ভ্রাতৃগণ! বিগত নিশায় স্বপ্নযােগে প্রভু মােহাম্মদ আমাকে দামেস্ক-গমনে আদেশ করিয়াছেন। আর আমার সাধ্য নাই যে, এখানে ক্ষণকালও বিলম্ব করি।”

 “হজরত! আমরা অজ্ঞ, অপরাধ মার্জ্জনা করুন। ঐ আদেশের জন্যই সপ্তাহকাল মদিনায় আপনার অবস্থিতির নিমিত্ত পূর্ব্বেও প্রার্থনা করিয়াছিলাম, গত কল্যের প্রার্থনাও ঐ কারণে। আমরা চির আজ্ঞাবহ দাস, মার্জ্জনা করুন। এখন আমাদের আর কোনও কথা নাই,—আপনিও প্রস্তুত হইয়াছেন, আমরাও প্রস্তুত আছি। আপনি অশ্বে কশাঘাত করিলেই দেখিবেন, কত লােক জয়নাল-উদ্ধারে আপনার অনুগামী হয়!”

 মােহাম্মদ হানিফা, মস্‌হাব কাক্কা, গাজী রহ্‌মান ও হানিফার আর আর আত্মীয়স্বজন এবং ভিন্ন ভিন্ন দেশীয় রাজগণ বীরদর্পে অশ্বপৃষ্ঠে ঈশ্বরের নাম করিয়া চাপিয়া বসিলেন। রণবাদ্য বাজিতে লাগিল। সৈন্যগণ শ্রেণীবদ্ধ