পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৩৯২

 বাহ্‌রামের বাহুবল দেখিয়া মারওয়ানও জেয়াদ শতমুখে প্রশংসা করিতে লাগিল। মারওয়ান উচ্চৈঃস্বরে বলিতে লাগিল, “বাহ্‌রাম, ওমর আলীকে মারিয়া ফেলিও না। রাজাজ্ঞা তাহা নহে। শূলে চড়াইয়া হইকে মারিতে হইবে। শিবিরের মধ্যে প্রাণবধের ইচ্ছা থাকিলে অনেক উপায়ই ছিল। শূলদণ্ড পর্য্যন্ত ইহাকে শূন্যে তুলিয়া লইয়া যাইতে হইবে।

 “যে হুকুম” বলিয়া বাহ্‌রাম এজিদের জয়-ঘোষণা করিতে করিতে ওমর আলীকে তৃণবৎ লইয়া চলিল। মারওয়ান ও জেয়াদও হাসিতে হাসিতে আর আর সঙ্গীসহ চলিল। দৃশ্য বড় ভয়ানক! সকলের চক্ষেই ভীম-দর্শন। শূলদণ্ডের চতুষ্পার্শে চক্রাকারে সৈন্যশ্রেণী দণ্ডায়মান। দর্শকগণের চক্ষু,—শূলের অগ্রভাগে। কাহারও মুখে কথা নাই। সকলেই নীরব। প্রান্তর নীরব।

 বাহ্‌রামের প্রশংসাবাদ করিতে লাগিল,—“বীরবর বাহ্‌রাম। তুমি ওমর আলীকে শূলদণ্ডে চড়াইয়া রাজাজ্ঞা প্রতিপালন কর।”

 জেয়াদ মারওয়ানকে বলিল, “আমার ইচ্ছা, যে পর্য্যন্ত যুদ্ধ শেষ না হয়, সে পর্য্যন্ত ওমর আলী শূলদণ্ডেই বিদ্ধ থাক।”

 মারওয়ান বলিল, “এ কথাটা বড় গুরুতর। মহারাজের অভিপ্রায় জানা আবশ্যক। শত্রুর মনে কষ্ট দিতে তোমার এ যুক্তি সর্ব্বপ্রধান বটে কিন্তু রাজাজ্ঞা তাহা নহে। আমার মতে মৃতদেহে শত্রুতা নাই। কিন্তু শূলদণ্ডে বিদ্ধ রাখিলে ইহা হানিফার বিশেষ মনোকষ্টের কারণ হইবে, তাহাতেও সন্দেহ নাই। শত্রুকে জব্দ করাই ত কথা। তোমার মত প্রকাশ করিয়া মহারাজের নিকট হইতে ইহার মীমাংসা করিয়া আসিতেছি। তুমি এদিকের কার্য্য শেষ কর। আমার প্রতি ভার অর্পিত হইয়াছিল, আমি সে ভার তোমাকে অর্পণ করিলাম। তুমি ওমর আলীকে মহারাজের আজ্ঞামত বধ কর। আমি মহারাজের নিকট হইতে ঐ কথার মীমাংসা করিয়া এখনই আসিতেছি।”

 জেয়াদ বাহ্‌রামকে বলিল, “বাহ্‌রাম। বন্দীকে জিজ্ঞাসা কর, এখন