পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৪০২

আর চক্ষা নাই! সন্ধির প্রস্তার মুখে আনিতেও আমার আর ক্ষমতা নাই—আর তাহাতে হানিফাও ভুলিবে না। সন্ধির নিশানে আর কিছুই হইবে না। শত সহস্র দূতের প্রস্তাবেও আর হানিফা কর্ণপাত করিবে না। পরাজয় স্বীকারে মৃত্তিকায় তরবারি রাখিয়া দিলেও আর সে ছাড়িবে না। যদি জয়নালের মুক্তির কথা গোপনই থাকে, তাহা হইলে যুদ্ধে আমাদের লাভ কি? জয়নালই যদি আমাদের হাতছাড়া হইল, তবে হানিফার পরাজয়ে ফল কি? ফল আছে। মহারাজের প্রাণ, স্বদেশের স্বাধীনতার সঙ্গে সঙ্গে আমার প্রাণরক্ষা করা ভিন্ন আর কি আশা? কিন্তু তাহাতেও আমার বিশেষ সন্দেহ আছে। হোসেনপুত্র জয়নাল!—সিংহশাবক সিংহ। আজই হউক, কালই হউক, দুদিন পরেই হউক, তাহার বল-বিক্রম সে প্রকাশ করিবে,—নিশ্চয়ই করিবে। সে নব-কেশরীর নর-গর্জ্জনে দামেস্কনগর কাঁপিবেই কাঁপিবে। তাহার পিতৃহত্যার প্রতিশোধ সে কালে লইবেই লইবে।”

 মারওয়ানের চিন্তার ইতি নাই। দামেস্কের এ দুর্দ্দশা কেন ঘটিল, ইহাও এক প্রশ্ন। এজিদের দোষ, কি তাহার দোষ—সে কথারও মীমাংসা হইতেছে। সর্ব্বোপরি প্রাণের ভয়—মহাভয়! যদি আবদুল্লাহ্ জেয়াদের উপর ওমর আলীর বধসাধন-ভার অর্পণ করিয়া রাজসমীপে সে না যাইত, তাহা হইলে এই নিশীথ সময়ে প্রান্তরে বসিয়া আর চিন্তার ভার তাকে বহন করিতে হইত না—এই কথাই বিশেষ করিয়া মারওয়ান আলোচনা করিতেছে।

 মারওয়ান যে স্থানে বসিয়াছিল, সে স্থান হইতে হানিফার শিবিরে প্রজ্জলিত দীপমালা সমুজ্জ্বল নক্ষত্রমালার ন্যায় তাহার চক্ষে দৃষ্ট হইতেছিল। প্রদীপ্ত দীপরাশির উজ্জলাভা মনঃসংযোগে দেখিতে দেখিতে তাহার মনে মুক্ত একটি কথার সঞ্চার হইল। কথাটা কিছু গুরুতর, অথচ নীচ। কিন্তু মারওয়ানের হৃদয়ে সে কথার সঞ্চার আজ নূতন নহে। বিশেষতঃ, আসন্নকালে বিপরীত বুদ্ধিবশে মারওয়ান মনের কথা মুখে আনিল। গুপ্তভাবে হানিফার শিবিরে যাইলে জয়নালের কোন সন্ধান জানিতে পারা যায় কি না? যদি জয়নাল হানিফার হস্তগত হইয়া থাকে, তবে সকলই