পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪১১
উদ্ধার পর্ব্ব—সপ্তবিংশ প্রবাহ

 “স্পষ্ট বুঝিতে পারিতেছি না, কিন্তু মানুষের গতিবিধিৱ ভাব বেশ বুঝা যাইতেছে। এক জন দুই জন নহে, বহুলোকের সাবধানে পদবিক্ষেপের শব্দ অনুভূত হইতেছে। আর এখানে থাকা উচিত নহে। বোধ হয়, বিপক্ষে আমাদের পরিচয় পাইয়াছে, এখনও আমাদিগকে ছাড়ে নাই। ঐ দেখ, সম্মুখে চাহিয়া দেখ। আমরা ছদ্মবেশে আসিয়াছি, কেবল তোমার নিকট একখানি তরবারি, আর আমার নিকট সামান্য একখানি ছুরি ভিন্ন অন্য কোন অস্ত্র আমাদের সঙ্গে নাই। আর থাকিলেই বা কি হইবে? তাহাদের তীরের মুখ হইতে দিনে রক্ষা পাওয়াই দায়, তায় আবার ঘোর নিশা। মনঃসংযোগে কান পাতিয়া শোন, যেন চতুর্দ্দিকেই লোকের গতিবিধি, চলাফেরা ও সাড়া পাওয়া যাইতেছে। চল, এখানে থাকা বিধেয় নহে।” এই বলিয়া শিলাখণ্ড হইতে উভয়ে গাত্রোথান করিয়া সমতল-ক্ষেত্রে দণ্ডায়মান হইল।

 জয়নাল আবেদীনও নিকটবর্ত্তী হইয়া গম্ভীর স্বরে জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোমরা কে?”

 মারওয়ান থতমত খাইয়া শঙ্কিত-চিত্তে উত্তর করিল, “আমরা পথিক, পথহারা হইয়া আসিয়াছি।”

 “নিশীথ সময়ে পথিক পৃথহারা হইয়া যুদ্ধক্ষেত্রে। এ কি কথা?”

 জয়নাল পুনরায় জিজ্ঞাসা করিলেন, “ওহে পথিক। তোমরা কি বিদেশী?”

 “হ্যাঁ, আমরা বিদেশী।

 “কি আশ্চর্য্য। তোমরা বিদেশী হইয়া এই মহা সংগ্রামস্থলে কি উদ্দেশ্যে আসিয়াছ? সত্য বল, কোন চিন্তা নাই।”

 মারওয়ান বলিল, “যথার্থ বলিতেছি, আমরা বিদেশী, অজানা দেশ, পথ-ঘাটের ভাল পরিচয় নাই—চিনি না। দামেস্ক-নগরে চাকরীর আশায় যাইতেছি। দিবসে সৈন্য-সামন্তের ভয়; রাত্রেই নগরে প্রবেশ করিব—ইহাই আশা এবং অন্তরের নিগূঢ় তত্ত্ব।”

 “তোমরা কোথা হইতে আসিতেছ? তোমাদের বসতি কোথায়?”

 “আমরা মদিনা হইতে আসিয়াছি। মদিনাই আমাদের বাসস্থান।”