পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৫১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৯৫
এজিদ বধ পর্ব্ব—পঞ্চম প্রবাহ

 ঘোরনাদে শব্দ হইল—“মোহাম্মদ হানিফা!”

 নিজ নাম শুনিতেই মোহাম্মদ হানিফা একটু থামিয়া দক্ষিণে বামে দৃষ্টিপাত করিতে লাগিলেন। গাজী রহ্‌মান প্রভৃতিও ঐ শব্দ শুনিয়া অগ্রসর হইতে সাহসী হইলেন না;—স্থিরভাবে দাড়াইলেন, এবং স্পষ্ট শুনিতে লাগিলেন যেন আকাশ ফাটিয়া, প্রান্তর কাঁপাইয়া শব্দ হইতেছে, “হানিফা! একটি জীব সৃষ্টি করিতে কত কৌশল, তাহা কি তুমি জান? সৃষ্টজীব বিনাশ করিতে তোমাকে সৃষ্টি করা হয় নাই। বিনা কারণে জীবের জীবনলীলা শেষ করিতে তোমার হস্তে তরবারি দেওয়া হয় নাই। তোমার হিংসাবৃত্তি চরিতার্থ করিবার জন্য মনুষ্যকুলে জন্ম হয় নাই। বিনাশ করা অতি সহজ, রক্ষা করা বড়ই কঠিন। সৃজন করা আরও কঠিন। এত প্রাণী বধ করিয়াও তোমার বধে নিবৃত্তি হইল না! জয়ের পর বধ অপেক্ষা পাপের কার্য্য জগতে আর কি আছে? নিরপরাধীর প্রাণ বিনাশ করা অপেক্ষা পাপের কার্য্য জগতে আর কি আছে? তুমি মহাপাপী। তেমোর প্রতি ঈশ্বরের এই আজ্ঞা যে, দুল্‌দুল সহিত রণবেশে রোজ-কেয়ামত পর্য্যন্ত প্রস্তরময় প্রাচীরে বেষ্টিত হইয়া আবদ্ধ থাক।”[১]

 বাণী শেষ হইতেই নিকটস্থ পর্ব্বতমালা হইতে অত্যুচ্চ প্রস্তরময় প্রাচীর আকাশ পাতাল কাঁপাইয়া বিকট শব্দে মোহাম্মদ হানিফাকে ঘিরিয়া ফেলিল। মোহাম্মদ হানিফা বন্দী হইলেন। রোজ-কেয়ামত পর্য্যন্ত ঐ অবস্থায়ই তিনি থাকিবেন।

 গাজী রহ্‌মান, মস্‌হাব কাক্কা প্রভৃতি এই অভাবনীয় ঘটনা দেখিয়া শত শত বার ঈশ্বরকে নমস্কার করিলেন। ম্লানমুখে মন্দ গতিতে প্রাচীরের নিকট যাইয়া অনেক অনুসন্ধান করিলেন, কিন্তু মানুষ দূরে থাকুক, সামান্য একটি পিপীলিকা প্রবেশেরও সুযোগ-পথ তাঁহারা খুঁজিয়া পাইলেন না। ধন্যরে কৌশলীর কৌশল!

 গাজী রহ্‌মান কোন সন্ধান করিতে না পারিয়াই হউক, কি কোন

  1. কোন কোন গ্রন্থ মতে হানিফার এখনও প্রাচীরের ভিতর আবদ্ধ হওয়া ততদূর প্রমাণ-সিদ্ধ নহে।