পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গৌরাঙ্গ ও তঁহার পরিকরবর্গ AS.6 তবে তঁহাকে এক একটি করিয়া ২২ বাজারে দাড় করাইয়া বেত্ৰাঘাত করিতে হইবে, এই আদেশ প্রচারিত হয় ; উদ্দেশ্য—যেন এই শাস্তির ভীষণত মুসলমানসমাজে দৃষ্টান্তস্থানীয় হয়। এই বেত্ৰাঘাতের ফলে হরিদাস মৃতপ্ৰায় হইলে তঁহাকে মৃত মনে করিয়া ছাড়িয়া C78 বেনেপোলের জমিদার রামচন্দ্ৰ খা মুসলমানদিগের শিক্ষামত ইহাকে প্ৰলুব্ধ করিতে চেষ্টা করেন। যে গুম্ফায় বসিয়া হরিদাস তপস্যা করিতেন, সেইখানে তিনি এক পরমা সুন্দরী গণিকাকে পাঠাইয়া দেন। হরিদাসের নিকট গণিকা উপযাচিক হইয়া প্ৰণয় প্রার্থনা করে। তিনি উত্তরে বলেন, “বেশ, আমি জপ শেষ করিয়া লই, শেষে তোমার কথা শুনিব।” সন্ধ্যা হইতে জপ সুরু করিয়া সেই জপ প্ৰভাতে শেষ হয়। কারণ তিনি প্ৰত্যহ তিন লক্ষ বার নাম জপ করিতেন। প্ৰভাত হওয়ার পরে তিনি গণিকাকে বলিলেন, “কাল আসিও ।” কারণ প্ৰাতঃকাল হইতে বহু ভক্ত র্তাহার দর্শনকামী হইয়া আসিয়া গুম্ফায় ভিড় করিয়াছিল । পরদিন এবং তার পরদিনও সেইরূপ ;-জপ সাঙ্গ হইতে সারারাত্ৰি কাটিয়া যায়গণিকা কোন সুবিধা পাইল না। তাহার চক্ষে আর একটি জগৎ প্ৰকাশিত হইল, সেই ভক্তিরাজ্যের দেবোপম ইন্দ্ৰিয়জয়ী সংযমী পুরুষের হরিনামের প্রতি অনুরাগ, গলদ শ্রী চক্ষু এবং সমাধির প্রশান্তি দেখিযা সেই বৰ্মণী দৈহিক সৌন্দৰ্য্য একান্ত তুচ্ছ বলিয়া মনে করিল। হরিদাসের চরণ ধরিয়া ক্ষমা প্রার্থনা করিয়া সে বৈষ্ণবধৰ্ম্মে দীক্ষিত হইল । পুৰীতে যথাকালে চৈতন্যদেব প্ৰত্যহ হরিদাসকে দেখিতে তাহার নিভৃত আশ্রমে যাইতেন ! - এই আশ্ৰমে কতকদিন সনাতন বাস করিয়াছিলেন । সনাতন হরিদাসকে বলিয়াছিলেন, “এমন অনেক লোক আছেন র্যাহারা ধৰ্ম্মের উপদেশ দেন, কিন্তু নিজেরা সে পথে চলেন না, আবার এমন লোকও আছেন যাহারা জণিতের সঙ্গে সমস্ত সম্বন্ধ কাটিয়া ফেলিয়া নিজে বা ধ্যান-ধারণায় প্ৰমত্ত আছেন, কিন্তু এমন লোকতো তোমাৰ মত দেখিলাম না, যিনি ধৰ্ম্ম শিক্ষা দেন এবং স্বয়ং ধৰ্ম্মের পথে অটল, যিনি একাধারে সন্ন্যাসী ও জগতের হিতে রত।” (চৈ চ অন্ত্য, ৪র্থ "অ, ) চৈতন্যদেব বলিয়াছিলেন, “তোমার চিন্তাগুলি গঙ্গাধারার ন্যায় পবিত্ৰ, তোমার আত্মা নিয়ত তাহাতে অবগাহন করে । ধৰ্ম্মেয় যে সকল শাস্ত্ৰসঙ্গত অনুষ্ঠান সকলে করিয়া থাকে, তোমার জীবনের প্রত্যেকটি কাৰ্য্যই তদ্রুপ পবিত্ৰ। তোমার নিত্য আচরিত আদর্শ বেদপাঠের পুণ্যময়। জগতে তোমার মত সাধু ও প্রকৃত ব্ৰাহ্মণ কোথায় পাইব ?” হরিদাস একদা চৈতন্যদেবকে বলিলেন-“আমার এ কি হইল ? আমি নিত্য তিন লক্ষ নাম জপ করিয়া থাকি, কিন্তু এখন দেহে ক্লান্তি আসিয়াছে, সংকল্পিত নাম জপ করিয়া উঠিতে পারি না।” উত্তরে চৈতন্যদেব বলিলেন, “এখন বৃদ্ধ হইয়াছ, এত নাম জপ করিবার তোমার প্রয়োজন নাই। তুমি নিজে পাবন, নামজপে তোমার পাবনী শক্তি আর কি বাড়াইবে।” ১৫১০-১১ খৃষ্টাব্দে হরিদাস দেহত্যাগ করেন। তখন চৈতন্যদেব তাহাব সম্মুখে ছিলেন, তিনি তঁাহার সমস্ত উচ্চ ব্ৰাহ্মণকুলজাত সহচরদিগকে মুমূর্ষু হরিদাসের পাদোদক সেবন করাইলেন এবং তঁহার সমাধির জন্য নিজ হস্তে প্ৰথম মাটী খুড়িলেন । পুরীতে সেই