পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীনিবাস, নরোত্তম ও শ্যামানন্দ QsND “রত্ন”,-গ্ৰন্থ কথাটা মনের ভিতর উহ্য রহিল। চরেরা এখন ঠিক মুঝিল ইহা মণিমাণিক্য না হইয়া যায় না ; বীরহাম্বিরের রাজসভায় জ্যোতিষিপ্রবর গণিয়া বলিলেন-ঐ শকটের বাক্সে ধনরত্ন আছে। গুপ্তচরেরা শকটের সঙ্গে সঙ্গে চলিল, সঙ্গে বীরহাম্বিরের নিযুক্ত দস্যদল । তামির নামক একস্থানে আসিয়া দাসু্যরা কালীপূজা করিয়া লইল এবং সেই গ্রামেই তাহারা শকটটি আক্রমণ করিবে প্রথমতঃ এরূপ সঙ্কল্প ছিল। কিন্তু সেই গ্রামে সুবিধা হইল না। তারপর রঘুনাথপুর হইয়া শকট ধীরগতিতে পঞ্চবটী নামক স্থানের দিকে আসিল, এই গ্রামের দক্ষিণে মালিয়ারা গ্রামে সন্ন্যাসিক্রয় এক সদাশয় জমিদারের আতিথ্য গ্ৰহণ করিয়া রাত্রিবাস করিলেন, পরদিন ইহাবা গোপালপুর পল্লীতে আসিয়া পৌছিলেন,-ঐ সময়ে রাত্রিকালে দুইশত দমু্য রাহাজানি করিয়া শকটসহ বৃহৎ কাষ্ঠাধার লইয়া চম্পট দিল । বীবহাম্বির প্রচুর ধন-লোভের আশায় সেই বাত্রে ঘুমান নাই। সেই রাত্রেই বাক্স আসিযা তাহাব রাজপ্রাসাদে পৌছিল । তিনি উহ! পাইয়া এত হৃষ্ট হইয়াছিলেন যে বাক্স খুলিবার পূর্বেই দমু্যদিগকে পারিশ্রমিক ও পুরস্কার দিয়া বিদায় করিয়া দিলেন। তিনি ভাণ্ডারে যাইয়া বাক্স খুলিলেন। কিন্তু একি, প্রথমেই একখানি সংস্কৃত গ্ৰন্থ। “রূপের আখরা যেন মুকুতার পাতি”, মহাপ্ৰভু বলিতেন। সেই মুক্তাসম অক্ষরগুলি দেখিয়া রাজা বিস্মিত হইলেন, সমস্তই পুস্তক-ধৰ্ম্মগ্রন্থ, রক্সের নামগন্ধ নাই। বীরহাম্বির সভার জ্যোতিষী পণ্ডিতকে বলিলেন, “তোমার ভবিষ্যদবাণী এইরূপ !” জ্যোতিষী লজ্জায় মাথা হেঁট করিলেন । রাজা বলিলেন, “রত্ন বই কি ? যে জহরত চিনে, তাহার নিকট এগুলি রত্নই বটে !” গুপ্তচরকে তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, “কোন সাধু-কোন পণ্ডিতের আজীবন সাধনার ফল তোমরা লইয়া আসিয়াছ ? তাঙ্গাদেব উপর তো অত্যাচার হয় নাই ? তাহদের নিঃশ্বাসে আমার রাজপ্রাসাদ দগ্ধ হইয়া যাইবে।” গুপ্তচবোবা বলিল, “মহারাজের নিষেধ আমরা সৰ্ব্বদা স্মরণ রাখি, যেখানে বিনা অত্যাচারে। কাৰ্য্যসিদ্ধি হয়—সেখানে আমরা কোন আঘাত করি না, এক্ষেত্রে নিবী, সাধুদিগের প্রতি কোনই অত্যাচার হয় নাই। রাজা চুপ করিয়া রহিলেন, অনেকক্ষণ তিনি অনুতপ্ত হৃদয়ে মৌন হইয়া রহিলেন । রাণী সুদক্ষিণ আসিয়া তঁহাকে অন্তঃপুরে লইয়া গেলেন । এদিকে তিন সাধু যুবকের মনে যে শোক হইল—তাহা বৰ্ণনীয় নহে। সাধু মহন্তদের আজীবন তপস্যার ফল তাঁহাদেব হাতে ন্যস্ত ছিল, সেই পবিত্ৰ মহামূল্যবান ন্যাস অপহৃত হইল। তাহাদের আর নকল ছিল না, বঙ্গদেশ হইতে গ্রন্থগুলি নকল করিয়া ভারতবর্ষেব নানাস্থানে প্রেরিত হইবে—-এই ছিল ব্যবস্থা । হরি-ভক্তিবিলাস ও চৈতন্যচরিতামৃত প্ৰভৃতি মহারাত্ব চিরদিনের জন্য বিলুপ্ত হইল । ধৈৰ্য্যহারা না হইয়া শ্ৰীনিবাস গ্রামবাসী একজনের নিকট হইতে কাগজ-কলম লইয়া জীব গোস্বামীর নিকট সমস্ত বৃত্তান্ত লিখিয়া পাঠাইলেন। কৃষ্ণদাস কবিরাজের তখন বৃদ্ধ বয়স, এই শোকসংবাদ তিনি সহা করিতে পারিলেন না, সেইখানেই অজ্ঞান হইয়া পড়িলেন এবং তখনই বা তাহার অব্যবহিত পরে মৃত্যুমুখে পতিত হইলেন। অপরদিকে শ্ৰীনিবাস। তঁহার দুই বন্ধুকে গৌড়মণ্ডলে পাঠাইয়া দিলেন, নরোত্তমের বৃহৎ বঙ্গ/৫৩