পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ʻa»S বৃহৎ বঙ্গ নির্দোষ জানিয়া লজ্জিত হইতেন, কিন্তু ভীত হইয়া বাড়ীর সকলের পরামর্শে সেই রাত্রেই রামচন্দ্ৰ ৬৪ দাড়িযুক্ত এবং কামান দ্বারা সুরক্ষিত নৌকাযোগে পলায়ন করেন। রাজকুমাবী পরম সাধবী বিমলা অবশ্য শেষে বাকলার অন্তঃপুরে তাহার স্বীয় স্থান অধিকার করিয়াছিলেন, কিন্তু শ্বশুর-জামাই যেন ভুজঙ্গ-নকুল’ হইয়া চিরকাল শক্রি হইয়া রহিলেন । বসন্ত রায় ও র্তাহার পুত্রের নিধন এবং স্বীয় জামাতার প্রতি ঈদৃশ ব্যবহারে তিনি জনসমাজের শ্রদ্ধা হারাইলেন । এই সকল পাপ ক্ষণস্থায়ী উত্তেজনামূলক, সুতরাং ক্ষমাহঁ হইলেও হইতে পারে, কিন্তু তিনি যেভাবে সন্দ্বীপের অধিপতি কার্ভালোকে হত্যা করিয়াছিলেন তাহা কোন ক্রমেই ক্ষমা করা যাইতে পারে না। আরাকানের রাজাকে তঁহার চিরশত্ৰু কার্ভালোর মুণ্ড উপহার দিতে পারিলে মগরাজার সঙ্গে মৈত্রী স্থাপিত হইবে এবং মোগলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিগ্ৰহে তাহার আনুকূল্য পাইবেন, এই ছিল তাহার অভিসন্ধি। আরাকানাধিপের সঙ্গে ষড়যন্ত্র দৃঢ়ীভূত করিয়া তিনি অতিশয় অন্তরঙ্গভাবে তাহার বাহ সরল ব্যবহারে ও মৈত্রীর প্রস্তাবে পর্তুগীজ বীরকে মুগ্ধ করিয়া স্বীয় রাজধানীতে লইয়া আসিয়া তাহাকে হত্যা করেন। ভুজারিকের বিবরণীতে এই ঘটনার সবিস্তার উল্লেখ আছে। আত্মীয়ভাবে নিমন্ত্রণ করিয়া এইরূপ আতিথ্য বঙ্গেশ্বর শশাঙ্ক একবার কান্যকুব্জাধিপতি বাজাবৰ্দ্ধনকে প্ৰদৰ্শন করিয়াছিলেন, দ্বিতীয়বার বাঙ্গলার ইতিহাসেব পৃষ্ঠায় প্রতাপাদিত্য এই কলঙ্ক প্ৰক্ষেপ করিলেন । ইহা ছাড়া অতিশয় ধনবান ও ক্ষমতাশালী “হ’রে শুড়ি” নামক আর এক বণিককে তিনি নিৰ্ম্মমভাবে হত্যা করেন, তাহার পরিবারবর্গ প্রতাপাদিত্যের ব্যবহারে এত ভীত হইয়াছিল যে তাহার রাজভয়ে জলমগ্ন হইয়া মরিয়াছিল। যমুনা হইতে ঢলুন্দিয়া মোহনার কাছে এখনও লোকে “হ’রে গুড়ির দহ” দেখাইয়া থাকে। এই “হ’রে শুড়ি’ গোবরডাঙ্গাব। নিকট একটি অতি বৃহৎ রাস্তা করাইয়া দিয়াছিলেন। এখনও “হ’বে শুড়ির রাস্তা”র অনেকটা বিদ্যমান আছে । কথিত আছে, একদা মদ্যপানে উন্মত্ত হইয়া তিনি এক বৃদ্ধ ভিখারিণীর স্তন কাটিয়া ফেলেন। এদিকে তাহার সদগুণরাশিরও শেষ ছিল না। তঁহার উদারতার খ্যাতি সমস্ত যশোরবাসীর মুখে এখনও শুনা যায। তিনি আশাব অতীত অর্থ প্রার্থীকে দিতেন । এমন কি, কথিত আছে. ১৫৯৯ খৃষ্টাব্দে যখন তিনি রাজাসনে উপবিষ্ট হইয়া কল্পতরু হইয়াছিলেন-তখন একজন ব্ৰাহ্মণ রাজ্ঞী শরৎকুমারীকে চাহিয়া বসিয়াছিলেন । ইহা শুধু পৰীক্ষার জন্য । কল্পতরু হওয়ার প্রথা রঘুবংশীয় রাজা দিলীপের সময় হইতে চলিয়া আসিযাছে ; কালিদাস তাহার বর্ণনা করিয়াছেন । কিন্তু এই রীতি বৌদ্ধযুগেই বিশেষরূপে অনুষ্ঠিত হইযাছিল । হিউনসাঙ্গ হর্ষবৰ্দ্ধনের এই কল্পতরু হওয়ার ব্যাপার সবিস্তারে লিপিবদ্ধ কবিয়াছেন। ক্যান্যকুক্তরাজ সর্বস্ব দান করিয়া তাহার ভগিনী রাজ্যশ্ৰীর নিকট হইতে লজ্জানিবারণার্থ একখানি বস্ত্ৰ চাহিয়া লইয়াছিলেন । দিলীপ সম্বন্ধে কৃত্তিবাস কালিদাসের বর্ণনা অনুসরণ করিয়া লিখিয়াছিলেন, “অষ্ঠ ভক্ষ্য মহারাজা নাহি রাখে থারে। - মৃত্তিকার ভাণ্ডে বাজা জলপান করে।” কিন্তু হিন্দুরাজত্বকালে এ প্ৰথা ছিল কি না সন্দেহ হল। বাল্মীকির