পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাঙ্গলার বিদ্রোহিগণ নদী দিয়া যাইতেছিলেন তখন চাদ রায়ের ভগিনী সুভদ্রাকে দেখিতে পান (সোণামণি হয়ত তাহার আদরের দেওয়া নাম ছিল, পোষাকী নাম সুভদ্রাটাই হয়ত তিনি মুসলমান অন্দর-মহলে প্রচার করিয়াছিলেন।)। উভয়ের প্রতি উভয়ে আকৃষ্ট হন। সুভদ্রা সোলার মাঝে চিঠি লিখিয়া ইশা খাকে কোন নির্দিষ্ট যোগের দিনে কোষা লইয়া শ্ৰীপুরে আসিতে অনুরোধ করেন-সেই যোগ উপলক্ষে তিনি নদীতে পুনরায় স্নান করিতে আসিবেন, তখন ইশা খাঁ তাহাকে অনায়াসে র্তাহার ক্ষিপ্ৰগতি কোষাতে উঠাইয়া লইয়া যাইতে পরিবেন। এই ইঙ্গিত পাইয়া ইশা খাঁ সেই যোগ উপলক্ষে সদ্যঃ মাতা সুভদ্রাকে ধরিয়া লইয়া যান। কেদার রায় তাহার কোষা লইয়া বহুদূৱ পৰ্য্যন্ত পলাতক তস্করকে অনুসরণ করিয়াছিলেনশেষে ইশা ঢাকায় মুসলমান নবাবের রাজ্যে আসিয়া পড়িলে তিনি ইহার প্রতিশোধ লাইবেন, এই প্ৰতিজ্ঞা করিয়া প্ৰত্যাবর্তন করিতে বাধ্য হন । কেদার রায় তদবধি ইশা খার সহিত চিরশত্রুতা করিয়া আসিয়াছিলেন, কিন্তু তাহার জীবদ্দশায় বিশেষ কিছু করিয়া উঠিতে পারেন নাই। তঁহার মৃত্যুর পর তিনি জঙ্গলবাড়ীতে উপস্থিত হইয়া তাহার ভগিনীর সঙ্গে দেখা করেন। তখন বিধবা বেগম ( নাম “নিয়ামৎ জান” হইয়াছিল।) দুই পুত্র আরাম ও বিরামের সহিত রাজধানীতে বাস করিতেছিলেন। তিনি নানা ছন্দে ভগিনীকে আদর করিয়া বলেন—ৰ্তাহার দুই কন্যার সঙ্গে আরাম ও বিরামের বিবাহ দিবেন, মুসলমানীমতে বিবাহ হইলে ইহাতে কোন বাধা হইবে না। কেদার রায় আরও বলেন যে র্তাহার কেদার রায়ের মৃত্যু- বৃদ্ধ মাতা বালক দুটীকে দেখিতে চান, সুতরাং মাতুলের সহিত সম্বন্ধে নানারাপ প্ৰবাদ । কয়েকদিনের জন্য তাহারা যাইয়া শ্ৰীপুরে বেড়াইয়া আসুক। নিয়ামৎ জান এই মেহের প্রস্তাবের মধ্যে তপ্ত লৌহশিলাকার ন্যায় ভ্রাতার ক্রর অভিসন্ধি বুঝিতে পারিলেন এবং কিছুতেই সন্মত হইলেন না। এদিকে কেদার রায় বিপুল ভোজের আয়োজন করিয়া জঙ্গলবাড়ীর গণ্যমান্য সকল ব্যক্তিকে নিমন্ত্ৰণ করিয়া র্তাহার কোষ নৌকাগুলিতে আনাইলেন, আরাম-বিরামও সঙ্গে আসিল । অনেক রাত্রি পৰ্য্যন্ত আমোদ-আহলাদে ব্যয়িত হইল এবং কেদার রায় তাহার ভাগিনেয়াদিগকে এরূপ মধুর ও অমায়িক ব্যবহারে তুষ্ট করিলেন যে তাহারা একেবারে মুগ্ধ হইয়া গেল। তিনি তাহাদিগকে “আজ বাকী রাতটুকু এখানে থাক,” এই অনুরোধ করিলে তােহাৱা আনন্দের সহিত স্বীকৃত হইল। রাজপুত্রদ্বয় নিদ্রিত হইলে বহুহস্তসঞ্চালিত কোষ অবশিষ্ট রাত্রি বাহিয়া অতি অল্প সময়ের মধ্যে শ্ৰীপুরে আসিল । “কালনেমী মামা” কেদার রায়ের মূৰ্ত্তি পবিবৰ্ত্তিত হইল। ভাগিনেয়াদ্বয়কে শৃঙ্খলাবদ্ধ করিয়া তিনি কারাগারে প্রেরণ করিলেন এবং তাহাদিগকে কালীমন্দিরে বলি দেওয়ার জন্য সমারোহ করিয়া আয়োজন চলিল। এদিকে কেদার রায়ের দুই কন্যা শুনিয়াছিলেন যে তাহদের পিসতুত ভাইয়েদের সঙ্গে তাহাদেৱ বিবাহ হইবে। তাঁহাদের পিতা স্বয়ং এই কথা দিয়াছেন, তাহারা প্রতারণা বুঝিল না, “যখন পিতার মুখ হইতে বাহির হইয়াছে, তখন আমরা তাহদেরই হইয়া গিয়াছি।” এই মনে কৰিয়া তাহারা বন্দিদ্বয়ের নিকট কারাগারে যাইয়া মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাব করিল। আরাম-বিরাম