পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

o বৃহৎ বঙ্গ و\لا এক সময়ে এই ভাষাগুলির মধ্যে মহারাষ্ট্রী ও মাগধী ভাষাই প্ৰাধান্ত লাভ করিয়াছিল। আৰ্যভাষায় ইহাদের ভিত গড়িয়া উঠিলেও তৎসঙ্গে বহু দেশজ আদিম ভাষার শব্দ এই প্ৰাকৃত ভাষায় প্ৰবেশ করিয়াছিল। বাঙ্গলা দেশে যে প্ৰাকৃত কথিত হইত, তাহার অনেকটাই অৰ্দ্ধ-মাগধী নামে পরিচিত ছিল । আমরা অনেকবার লিখিয়াছি, বাঙ্গালীরাই মগধের শিক্ষা-দীক্ষার উত্তরাধিকারী হইয়াছিলেন এবং আদিকালে কথিত বাঙ্গলা ভাষার উপর মাগধী প্ৰাকৃতের প্রভাব খুৰ বেশী হইয়াছিল। কোন কোন পণ্ডিত মনে করেন, শুধু অৰ্দ্ধমাগধী নহে, পৈশাচিক প্রাকৃতেরও কতকগুলি লক্ষণ এই ভাষায় স্পষ্টরূপে দৃষ্ট হয়। যাহা হউক, এই সকল ভাষাতত্বের সুন্ম বিশ্লেষণ করিবার স্থান বা অবকাশ আমাদের নাই। বৈদিক যুগের ভাষার ব্যাকরণ আছে, তাহার সাহায্যে বৈদিক-সাহিত্যে আমরা প্ৰবেশ লাভ করিতে পারি। দ্বিতীয় যুগে আৰ্য্যভাষা সংস্কৃত; পাণিনি ও তৎপূর্ববৰ্ত্ত কয়েকজন বৈয়াকরণ হইতে আরম্ভ করিয়া বোপদেব এবং ক্রমদীশ্বর। পৰ্য্যন্ত শত শত পণ্ডিত ইহার ব্যাখ্যা করিয়াছেন। তৃতীয় যুগে সংস্কৃতের সঙ্গে সঙ্গে পালি ও প্ৰাকৃত ভাষা সমৃদ্ধ হইয়া উঠে, এই দুই ভাষায় বহু গ্ৰন্থ লিখিত হয় এবং ইহাদের রীতি, নীতি, রচনা প্ৰণালী ও প্ৰকৃতি বুঝাইবার জন্যও ব্যাকরণের অভাব হয় নাই। ক্রমে পালি ও প্ৰাকৃত ভাষা সাধারণের অনধিগম্য হইয়া উঠিল । অলঙ্কার-শাস্ত্র ও পাণ্ডিত্য ইহাদিগকে গ্ৰাস করিয়া বসিল, সুতরাং জনসাধারণের সুখদুঃখ ও মনের ভাব বুঝাইবার পক্ষে ইহারা আর উপযোগী রহিল না, তখন জনসাধারণের কথিত ভাষায় পুনরায় সংগীত ও প্ৰবচনাদি রচিত হইতে লাগিল। সংস্কৃতের আদিযুগে পণ্ডিতেরা প্ৰাদেশিক ভাষাগুলিকে “প্ৰাকৃত” নাম দিয়াছিলেন,—এই নাম কতকটা ঘূণাব্যঞ্জক ; শিক্ষিতগণের গণ্ডীর বহির্ভূত লোকেরা “প্ৰাকৃত” সংজ্ঞায় অভিহিত হইত। রামায়ণের লঙ্কাকাণ্ডের শেষ দিকে সন্দিগ্ধচিত্ত রামের প্রতি ক্রুদ্ধ হইয়া সীতা বলিয়াছিলেন, “রাম, তুমি প্রাঙ্ক ৩ ব্যক্তি যেরূপ তাহার স্ত্রীকে গালি দেয়, সেইরূপ অপভাষা ব্যবহার করিতেছি কেন?” ইহা হইতেই বুঝা যায় যে, ‘প্ৰাকৃত” KDYY LgD KDtBDD DDBDBSSELD DBDDDS বাঙ্গলাদেশে যে সকল পুস্তক প্ৰাকৃত ভাষায় লিখিত হইয়াছিল, তাহা কি হইল-এই প্রশ্ন সহজেই মনে হয়। প্ৰাকৃত ভাষায় সাধারণতঃ বৌদ্ধগণই গ্ৰন্থাদি রচনা করিতেন, সুতরাং অনায়াসে এই সিদ্ধান্ত করা যাইতে পারে যে পরাভূত বৌদ্ধ পণ্ডিতগণ এদেশ হইতে চলিয়া যাওয়ার পরে প্রাকৃত ভাষায় লিখিত পুথি, তথা ঐ ভাষার প্রভাব, এদেশ হইতে অন্তহিত হইল। সেন-রাজাদের সময় হইতে সংস্কৃতের উপর লোকদের অত্যধিক ঝোক হইল। সুতরাং সংস্কৃত নাটকাদিতে স্ত্রীলোক ও ইতর ব্যক্তিদের কথোপকথনের যে নিদর্শন পাওয়া যায় তাহা ছাড়া এদেশ-প্রচলিত প্ৰাকৃত ভাষায় লিখিত পুস্তক খুব অল্পই দেখা যায়— কতকটা নিশ্চিহ্ন হইয়া প্ৰাকৃত ভাষা উত্তর-ভারত হইতে বিলুপ্ত হইয়াছে। “গৌড়ৰহ” ভাষার তিন যুগ। ‘ব্রজবুলি” এ দেশপ্রচলিত প্রাকৃতের নিদর্শন। কিনা ?