পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

GAV বৃহৎ বঙ্গ হুসেন সাহ তাহার দীর্ঘ ছাবিস বৎসরের রাজত্বকালে সমস্ত বঙ্গদেশের প্রজার চিত্ত আকর্ষণ করিয়াছিলেন বলিয়া মনে হয় ; ইনি চৈতন্যদেবকে শ্রদ্ধা করিতেন এবং কথিত আছে ইহারই রাজ-প্ৰাসাদে হিন্দু ও মুসলমানকে এক দেবতার উপাসক করিবার উদ্দেশ্যে “সত্যপীর’ নামক মিশ্র দেবতা পরিকল্পিত হন । এই সত্যপীর সম্বন্ধে সর্বপ্ৰথম মৈমনসিংহ-নিবাসী কঙ্ক নামক জাতিচু্যত এক ব্ৰাহ্মণ-যুবক তঁহার গুরু এক পীরের আদেশে কাব্য রচনা করেন। এই কাব্যে সত্যপীরের মহিমা-প্রচারের ব্যাপদেশে বিদ্যাসুন্দরের উপাখ্যান বর্ণিত হইয়াছে। ইহাই বাঙ্গলাভাষার সর্বপ্রথম বিদ্যাসুন্দর। পুস্তকখানি কবিত্ব-পূর্ণ সরল ভাষায় লিখিত, ইহা এখনও মুদ্রিত হয় নাই। আমার নিকট ইহার হস্ত-লিখিত একখানি নকল আছে। কাব্যখানি অনুমান ১৫০২ খৃষ্টাব্দে রচিত হইযাছিল। সত্যপীরের ন্যায় “মাণিকপীর’ এবং ‘কালুগাজি’ হিন্দুমুসলমানের উপাস্য মিশ্র দেবতা এবং ইহাদের মহিমজ্ঞাপক অনেক পুস্তকও বঙ্গভাষায় বিরচিত হইয়াছিল। বাঙ্গলাভাষার উৎসাহ-দাতা আরও অনেক মুসলমান বাদসহওমরাহের নাম আমরা পাইয়াছি। এখানে তঁহাদের উল্লেখের অবকাশ নাই। আমাদের ধারণা যে মুসলমান বাদসাহিদের অনুগ্রহেই বাঙ্গলাভাষী রাজ-দরবারে ও ভদ্ৰ-সমাজে প্রবেশের প্ৰথম সুবিধা পাইয়াছিল, নতুবা সংস্কৃতের ভ্ৰকুট সহ্য করিয়া আমাদের দীন-হীন মাতৃভাষা জনসাধারণের মধ্যে প্ৰচলিত থাকিলে ব্ৰাহ্মণ্য-শাসিত ভদ্র-সমাজে স্থান লাভ করিতে পারিত না। বঙ্গীয় মুসলমানের অধিকাংশই বৌদ্ধসম্প্রদায় হইতে গৃহীত হইয়াছিল। বৌদ্ধজনসাধারণের মধ্যে বাঙ্গলার চর্চা প্ৰচলিত ছিল । সুতরাং স্বদেশের ভাষার উপর অনুরাগ বঙ্গের মুসলমানের পূর্ব-সংস্কার হইতে পাইয়াছিলেন। ব্ৰাহ্মণের এই সকল কাৰ্য্যে হয়ত উৎসাহ দেখান নাই। কবীন্দ্র পরমেশ্বর কি জাতীয় ছিলেন, তাহার উল্লেখ নাই, কিন্তু ব্ৰাহ্মণ হইলে তঁহার অসংখ্য ভণিতার মধ্যে কোন না। কোন স্থানে “দ্বিজ” শব্দের প্রয়োগ থাকিত বলিয়া মনে হয়। এক “কবীন্দ্ৰ’’ ছাড়া তঁহার আর কোন উপাধির উল্লেখ নাই। এখনও হয়ত চট্টগ্রাম বা নোয়াখালীর কোন পুথিতে তাহার আত্মবিবরণ পাওয়া যাইতে পারে। শ্ৰীকরণ নন্দী ব্ৰাহ্মণ ছিলেন না-বৈদ্য বা কায়স্থ ছিলেন। মালাধর বসু কায়স্থ ছিলেন । সুতরাং দেখা যাইতেছে, ব্ৰাহ্মণগণ সহজে ঘুণিত ভাষায় কাব্য লিখিতে দাঁড়ান নাই, কিন্তু তৎপরে শাহেন স্যা বাদসাহগণের আদেশ ও উৎসাহে তঁাহারা এই কাৰ্য্যে অগ্রসর হইয়াছিলেন এবং রাজা মহারাজদের রাজসভা ও বাদাসাহের দরবারের দেখাদেখি বঙ্গভাষার জন্য তাহদের দ্বার উন্মুক্ত করিয়াছিলেন। মহাভারতের সর্বপ্রথম অনুবাদ করেন। সঞ্জয় । ইনি ব্ৰাহ্মণ ছিলেন না, ভরদ্বাজ-গোত্রীয় বৈদ্য ছিলেন। কেহ কেহ অনুমান করেন, তঁহার বাড়ী বিক্রমপুর ছিল, তথায় ঐ গোত্রীয় বৈদ্য এখনও অনেক আছেন। আবার কেহ কেহ বলেন তিনি শ্ৰীহট্টবাসী ছিলেন। পরবর্তী অনুবাদকগণের মধ্যে কবীন্দ্র পরমেশ্বর ও ছুটি খ্যা পূর্ববঙ্গবাসী ছিলেন এবং পশ্চিমবঙ্গবাসী নিত্যানন্দ ঘোষ সমগ্ৰ মহাভারতের যে অনুবাদ করেন, তাহা রাঢ় দেশে ও চব্বিশ পরগনায় বিশেষ প্ৰসিদ্ধিলাভ করিয়াছিল। পূর্ববঙ্গে 死颂图1