পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গের প্রাদেশিক ইতিহাস-শ্ৰীহট্ট di eby’S অভিযান করিয়াছিলেন। উক্ত পুস্তকে সেই অভিযান সবিস্তারে বর্ণিত হইয়াছে ; শেষ পঙক্তি এইরূপ “হইল সাবেকী দশা সিকন্দর সাহার।” ইহার পরে তিনি দিল্লীশ্বরের সঙ্গে যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত থাকাতে বঙ্গেশ্বর শ্ৰীহট্টের প্রতি বিশেষ মনোযোগী হইতে পারেন নাই। সম্ভবতঃ গৌড়-গোবিন্দের সঙ্গে তাহার সন্ধি হইয়াছিল, আদিনা মসজিদ এই সন্ধির ফলেই হইয়া থাকিবে । কিন্তু এই সময়ে আর একজন মুসলমান নেতা সমরাঙ্গনে অবতীর্ণ হইলেন, ইনি বিখ্যাত সাধু সাহ জালাল। ইনি হজরত মোহাম্মদের জ্ঞাতির বংশধর এবং ইহার মাতাও সৈয়দ বংশীয় ছিলেন এবং পিতা মাহমুদ কাফেরের সঙ্গে যুদ্ধে নিহত হন। সাহ জালালের জন্মস্থান আরবের অন্তৰ্গত পবিত্র তীর্থ হেজাজ। সাহ জালাল চতুৰ্দশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে জন্মগ্রহণ করেন। কথিত আছে, ইনি অল্প বয়সেই সাধনার পথে এতটা অগ্রসর হইয়াছিলেন যে, একটা বাস্ত্ৰকে তদীয় আশ্ৰম-পালিত হরিণ আক্রমণ করিতে দেখিয়া সেই ব্যান্ত্রের গণ্ডে এরূপ ভীষণ চপেটাঘাত করিয়াছিলেন যে, ব্যাস্ত্ৰ দন্তরাজি বিকশিত করিয়া তখনই মৃত্যুমুখে পতিত হয়। সাহ জালাল ভারতবর্ষে আসিবাব পর তঁাহার। তপঃপ্রভাবের কথা সর্বত্র প্রচারিত হইল, তিনি বিষ খাইয়া বিষ হজম করিয়াছিলেন এবং চৰ্ম্ম-পাদুকা পায়ে নদ-নদী অতিক্রম করিষাছিলেন বলিয়া জন-শ্রুতি আছে। তোয়ারিখে জালালিতে এইরূপ অনেক উপাখ্যান বািণত আছে। দিল্লীতে আসার পর হতভাগ্য হিন্দু রাজার দ্বারা দণ্ডিত বুরহান উদ্দিন ( যাহার এক হস্ত গৌড়-গোবিন্দ কর্তৃক কত্তিত হইয়াছিল ) এবং কাজি নুরুদ্দিন তাহার শরণাপন্ন হইলেন। সাহ জালাল ইসলাম-ধৰ্ম্ম-প্রচারার্থ শ্ৰীহট্টের অভিমুখে রওনা হইলেন। র্তাহার নামে আকৃষ্ট হইয়া শত শত লোক তঁহত ধী দলে ভিড়িয়া গেল। তিনি বার জন সঙ্গী সহ রওনা হইয়াছিলেন, কিছু দূর যাইতে যাইতেই এই সংখ্যা বৃদ্ধি পাইয়া ৩৬০ জন হইল। এ দিকে কাজি নুরুদিনের অধীনেও বিস্তর সৈন্য ছিল । তিনি যতই অগ্রসর হইতে লাগিলেন, ততই তাহার অলৌকিক সাধনা-বলের খ্যাতিতে আকৃষ্ট হইয়া তদীয় অনুচরেরা সংখ্যায় পুষ্টি লাভ করিল। শ্ৰীহট্টের সীমায় অবস্থিত চৌকি (দিনারপুর পরগনায় ) নামক স্থানে আসিলে গৌড়-গোবিন্দ এই অভিযানের সংবাদ পাইলেন। সাহ জালাল ব্ৰহ্মপুত্ৰ উত্তীর্ণ না হইতে পারেন, এজন্য হিন্দু রাজা সেই নদে সমস্ত তরীর যাতায়াত নিষেধ করিয়া দিয়াছিলেন, কিন্তু মুসলমান সৈন্য কৌশলক্রমে সেই নদ অতিক্ৰম করিল ; তারপর তাহারা বরাক নদীর তীরবর্তী বাহাদুরপুরে পৌছিলে-সেখানেও গৌড়-গোবিন্দ সমস্ত নৌকার যাতায়াত * - করিয়া দিয়াছিলেন, কিন্তু সেই চেষ্টায়ও তিনি ব্যর্থ হইলেন। সাধুর কেরামতের কথা সর্বত্র প্ৰচারিত হইল। রাজার মুসলমানের প্রতি অত্যাচারে এক শ্রেণীর লোক তঁাহার প্রতি বিমুখ ছিল, অপরদিকে হজরতের বংশোদ্ভব সাধুর অলৌকিক ক্ষমতার উপর চারিদিকে এরূপ বিশ্বাস জন্মিয়াছিল যে, গৌড়-গোবিন্দ নিজেকে নিতান্ত নিঃসহায় মনে করিয়া পেচাগড় দুর্গে আশ্ৰয় লইলেন। কথিত আছে, রাজার যে গগনস্পৰ্শী প্ৰস্তর-মন্দির ছিল, তাহ সাহি জালাল বৃহৎ বঙ্গ/৭৪