পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গের প্রাদেশিক ইতিহাস-অন্যান্য রাজা ও জমিদারগণ ১১৩৯ দীঘির কথা ভাবিবার মত মনোবৃত্তিই বা কই ? সহরে নিতান্ত নিঃসম্বল ব্যক্তিও জল কিনিয়া খাইতেছে। মণিপুরের নিকট দিসপুরে ৬০০ হস্ত বেড় যুক্ত দুইটি দীঘি দৃষ্ট হইয়া থাকে। আর একটি দীঘির সংবাদ পাইয়াছি, তাহা নাকি মহীপাল দীঘি হইতেও বড়। কুষ্ঠিয়ার নিকটে মাধবপুরে মুসলমান-বিজয়ের কিছু পূর্বে কোন হিন্দু রাজার রাজধানী ছিল । সুলতান সামসুদিনের পিতার নাম কতকগুলি মুদ্রায় তথায় পাওয়া গিয়াছে। সুতরাং তাহ ১৩৩৯ পৃষ্টাব্দের পূর্বের। এই মাধবপুরে প্ৰাচীন অনেক কীৰ্ত্তি-চিহ্ন আছে। আশ্চৰ্য্যের বিষয় এই পল্লীতে পাশাপাশি ৩০টি বৃহৎ দীঘির চিহ্ন আছে, তন্মধ্যে ২০টিতে এখনও গ্ৰীষ্মকালে জল থাকে। বাঙ্গলা দেশের রাজারা যে ধনরত্ন-এমন কি তাম-কঁাসার বাসনপত্র দীঘিতে ফেলিয়া রাখিয়া আপৎকালে চলিয়া যাইতেন, তাহার একটা প্ৰমাণ এই যে, বহু দীঘি সম্বন্ধে প্ৰবাদ আছে, যে-কোন উৎসব উপলক্ষে কেহ বাসনপত্ৰ চাহিলেই দীঘি হইতে পাওয়া যাইত এবং উৎসবান্তে তাহা ফিরাইয়া দিতে হইত। মাধবপুরের কোন কোন দীঘি সম্বন্ধেও এরূপ প্ৰবাদ আছে। এই দীঘিগুলির মধ্যে “গোবিন্দ-পুকুর” প্ৰসিদ্ধ —দীঘির আয়তন ১৬ বিঘা। ইহা ছাড়া “ফুলবাড়ী পুকুর,” “কালা পুকুর,” “বৰ্ষা গাড়া,” “মোচা পুকুর,” “গোপাল গাড়া,” “চিন্তা গাড়া,” “গোয়াল গাড়া,” “সোনা গাড়া” প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য । এত অল্প পরিসর স্থানের মধ্যে এতগুলি পুকুর কেন খাত হইয়াছিল, ইহা একটা সমস্যা । হয়ত কোন রাজা বা রাণী নির্দিষ্ট সংখ্যক দীঘি খনন করিতে দেবতার কাছে সঙ্কল্প করিয়া থাকিবেন । বঙ্গের বহু স্থানে “জিয়স পুকুর” নামধেয় কতকগুলি দীঘি আছে। প্ৰবাদ, এক সময়ে উহার জলস্পর্শে মৃত ব্যক্তি জীবন পাইত, এইরূপ বহু দীঘি তান্ত্রিক অনুষ্ঠানপুত ছিল। মাধবপুরের বিস্তৃত বিবরণ আমি ঢাকা জেলার বারুদি হাইস্কুলের হেড মাষ্টার শ্ৰীযুক্ত উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচাৰ্য্য, এম. এ. মহাশয়ের নিকট হইতে পাইয়াছি। জে. সি. ফ্রেঞ্চ সাহেব লিখিয়াছেন, মহাস্থান খুড়িলে বহুমূল্য ঐতিহাসিক উপাদান পাওয়া যাইবে, কিন্তু ঐতিহাসিকগণ উদাসীন (৪০৮ পৃঃ) । এই স্থান হইতে মি” দীক্ষিত ব্ৰাহ্মীলিপিতে উৎকীর্ণ তাম্রপট আবিষ্কার করিয়াছেন । ২৪-পরগনায় জটার দেউল ৯৭৫ খৃষ্টাব্দে রাজা জয়ন্ত কর্তৃক নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল (১১২৯ পৃঃ) । যশোরে মহম্মদপুরে রাজা সীতারামের মন্দিরাদির ংসাবশেষ দৃষ্ট হয়। প্রত্যেক রাজারই দুর্গ ছিল, এই দুর্গগুলিকে 'কোট বাড়ী” বলা হইত। দিনাজপুরে বিরাটগড় ( বিরাট রাজার বলিয়া প্ৰবাদ), চান্দেবার দুর্গ, বাণগড়ে বাণ রাজার দুর্গ, বৰ্দ্ধমানে রাণীগঞ্জের অধীন চুকলিয়া পল্লীতে রাজা নরোত্তমের দুর্গ, বাঁকুড়ায় নূতন গ্রামে ( থানা গুণ্ডা) করাস গড়, কৃষ্ণ গড়, অসুর গড়, শ্যামসুন্দর গড় প্রভৃতির ভগ্নাবশেষ দৃষ্ট হয়! মেদিনীপুরে ময়নাগড়ের দুর্গ (লাউসেন নিৰ্ম্মিত, খৃষ্টীয় একাদশ শতাব্দী), ২৪-পরগনার কাউগাছির দুর্গ ( আয়তনে চার মাইল, চতুদিকে পরিখা ), মৈমনসিংহে গড় জরিপা দিলীপ সিংহের গড় ( ১৫৮৫ খৃঃ অব্দে ইশা খাঁ কর্তৃক অধিকৃত ), হুগলী জেলায় ভাস্তাড়ার গড়, দিনাজপুরে সাতপাড়া গড় ও যোগীথোপা গড়-এই সকল প্রাচীন দুর্গের