পাতা:বৌদ্ধ-ভারত.djvu/৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪২
বৌদ্ধ-ভারত

যাঁহাদের প্রচেষ্টায় পৃথিবীর অন্যতম প্রধান ধর্ম্মে পরিণত হইয়াছে অশোক তাঁহাদের মধ্যে প্রধান;

 অশোকের বৌদ্ধ ধর্ম্ম গ্রহণের ইতিহাস তাঁহারই অনুশাসনলিপি পাঠে অবগত হওয়া যায়। তিনি তাঁহার রাজত্বের অষ্টবর্ষে কলিঙ্গ জয় করেন। ঐ যুদ্ধে বহু ব্যক্তির জীবননাশ এবং বহু ব্যাক্তি বন্দী হইয়াছিল। হিংসামূলক এই যুদ্ধ তাঁহাকে ব্যথিত করিয়াছিল। তাঁহার শিলালিপিতে উক্ত হইয়াছে—“এই রাজ্যের ব্রাহ্মণ ও সাধুরা মাতাপিতা ও গুরুজনকে ভক্তি করে, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন ও দাসদাসীর প্রতি ইহারা সদ্ব্যবহার করে। এইরূপ চরিত্রবান, ব্যক্তিগণ যে দেশে বাস করে সেই দেশে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়াছে।” যাহারা নিরপরাধ, শিষ্ট ও সচ্চরিত্র তাহাদিগকে হত্যা ও বন্দী করিয়া অশোক স্বভাবতঃই অনুতপ্ত হইয়াছিলেন। এই জন্যই তিনি অহিংসমূলক বৌদ্ধধর্ম্ম গ্রহণ করিয়াছিলেন। ইহার আড়াই বৎসর পরে তিনি ধর্ম্মযাজকরূপে বৌদ্ধ সঙ্ঘে প্রবেশ করিয়া সর্ব্বপ্রযত্নে বৌদ্ধধর্ম্ম প্রচারে নিরত হইলেন।

 দীপবংস ও মহাবংসে উক্ত হইয়াছে যে, মহারাজ অশোক কাশ্মীর, গান্ধার, মহিসা (বর্ত্তমান মহীশূর), বনবাস (সম্ভবতঃ রাজ পুতনা), অপরন্তুক (পশ্চিম পঞ্জাব), মহারাষ্ট্র, যোনলোক (বাক্‌ট্রিয়া ও গ্রীকরাজ্য সমূহ), হিমবত (মধ্য হিমালয়), সুবর্ণ—ভূমি (থাটন অর্থাৎ নিম্ন ব্রহ্মদেশ), এবং লঙ্কাদ্বীপে বৌদ্ধধর্ম্ম প্রচারার্থ প্রচারক পাঠাইয়াছিলেন। তাঁহার অনুশাসন লিপি পাঠে অবগত হওয়া যায় যে, চোলা (মান্দ্রাজ), পাণ্ড্য (মাদুরা), সত্যপুরা (সাতপুরা পর্ব্বতশ্রেণী), কেরল (ত্রিবাঙ্কুর), সিংহল, সিরিয়ার গ্রীকরাজ এণ্টিয়োকাসের রাজ্যে তাঁহার অভিপ্রায় অনুসারে বৌদ্ধধর্ম্ম গৃহীত হইয়াছিল। অপর এক অনুশাসন লিপিতে প্রকাশ যে, তাঁহার দূতগণ সিরিয়া, মিশর, এপিরস্, মেসিডন্ এবং সিরিনের গ্রীকরাজাদের সমীপে গমন করিয়াছিল।

 সম্রাট্ অশোক বৌদ্ধ সন্ন্যাসী হইয়া বৌদ্ধধর্ম্ম পৃথিবীময়