দাঁড়াইল। কাল্মক্ দূরে রহিল, রমণী গৃহদ্বারে কান লাগাইয়া কথোপকথন শুনিতে লাগিল। কিয়ৎক্ষণপরে কাল্মক্ জিজ্ঞাসা করিল, “কি শুনিলি?”
“বাঙ্গালা মুলুকের বুলি, কিছু বুঝিতে পারিতেছি না।”
“মরদ্টার নাম কি?”
“আ মর্, তাইত খুঁজিতেছি, সরাবের শিশিটা দে।”
“আর সরাব খাইলে টলিয়া পড়িয় যাইবি, তখন কোতয়ালীতে ধরিয়া লইয়া যাইবে।”
রাজধানীর জনাকীর্ণ পথে বহুলোক চলিতেছিল, ক্ষুদ্র গৃহদ্বারে দীর্ঘাকার সশস্ত্র কাল্মক্কে দেখিয়া কেহ কেহ বিস্মিত হইল; কিন্তু তাহার সহিত রমণীকে দেখিয়া কোনও সন্দেহ করিল না। সেই সময়ে বিনোদিনী জিজ্ঞাসা করিল, “ময়ূখ, তুমি কখন্ দেওয়ান-ই-খাসে যাইবে?” ময়ূখ কহিলেন, “সন্ধ্যার পরে।”
তাহা শুনিয়া দুয়ারের বাহিরে রমণী বলিয়া উঠিল, “দোস্ত, শীঘ্র শিশিটা দে।” কাল্মক্ জিজ্ঞাসা করিল, “কেন?”
“মোগল বাদশাহের অন্দর মহলের চাকরী, আর বাঙ্গালা মুলুকের জবান, আর মরুভূমি এই তিনই সমান।”
“কিছু বুঝিলি না কি?”
“নামটা শুনিয়াছি।” “কি?” “মহুক্।” “ঠিক শুনিয়াছিস্ ত?” “ঠিক শুনিয়াছি, তুই শিশিটা দে।” “এখানে দাঁড়াইয়া আর কাজ নাই, তুই পথে চলিয়া আয়।”