পাতা:ময়ূখ - রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/৫২

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৪৪
ময়ূখ

দুই তিন বার বাজিয়া গেল। অন্য দিন সপ্তগ্রাম সহরের মধ্যস্থলে প্রকাশ্য রাজপথে রূপসী যুবতীর সেতারের আওয়াজ শুনিলে লোক জমিয়া যাইত; কিন্তু আজি সপ্তগ্রামের পথে অসম্ভব জনতা, নগরের চারিদিক হইতে ভীষণ কোলাহল উত্থিত হইতেছে, সেতারের মিঠা আওয়াজ কাহারও কাণে পৌঁছিতেছে না। কোলাহল ক্রমশঃ বাড়িতে লাগিল, যুবতী বিরক্ত হইয়া সেতার রাখিল। এই সময়ে ভীষণ কোলাহল ভেদ করিয়া “ফিরিঙ্গি আসিল, ফিরিঙ্গি আসিল, বাজার লুটিবে” শব্দ উঠিল। দোকানদারগণ দোকানপাট বন্ধ করিতে আরম্ভ করিল। ফিরিঙ্গি আসিতেছে শুনিয়া যুবতী, ফতেমা ও নাজীর আহমদ্‌ উঠিয়া দাঁড়াইয়াছিল; সহসা নাজীর আহমদ বলিয়া উঠিল, “বিবি সাহেব, সর্ব্বনাশ হইয়াছে, আমার ত আফিম ফুরাইয়াছে, আমাকে এখনই একবার বাজারে যাইতে হইবে।” যুবতীর মুখ শুকাইয়া গেল, সে কহিল, “সে কি নাজীর? এই হাঙ্গামার মধ্যে আমাদের ফেলিয়া কোথায় যাইবে?” বুড়া হাতযোড় করিয়া কাতর কণ্ঠে কহিল, “দোহাই বিবি সাহেব, বুড়া মানুষ আফিম না পাইলে এখনই মরিয়া যাইব, দোকান পাট সব বন্ধ হইয়া গেল।” বুড়া বারাণ্ডার দুয়ারের দিকে অগ্রসর হইল, তাহা দেখিয়া যুবতী তাহার হাত ধরিল এবং কাতর কণ্ঠে কহিল, “নাজীর, এমন সময়ে আমাদের একা ফেলিয়া যাইও না।” সে শব্দ পাছে তাহার কর্ণে প্রবেশ করে সেই ভয়ে বৃদ্ধ কাণে আঙ্গুল দিয়া হাত ছাড়াইয়া পলাইল। তখন