পাতা:মানসী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/২৫৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২৫৬
পরিশিষ্ট

ভালো করে ভেবে দেখতে গেলে, মানসীর ভালোবাসার অংশটুকুই কাব্যকথা— বড়ো রকমের সুন্দর রকমের খেলা মাত্র— ওর আসল সত্যি কথাটুকু হচ্ছে এই যে, মানুষ কী চায় তা কিছু জানে না— এক-ঘটী জল চায় কি আধখানা বেল চায় জিজ্ঞাসা করলে বলতে পারে না; আমি এমন অবস্থায় মনের সঙ্গে আপসে বোঝাপড়া করে কল্পনার কল্পবৃক্ষের মায়াফল পাড়বার চেষ্টা করছি। জানি সত্য একে নিতান্ত অসন্তোষজনক, তার উপরে আবার রূঢ়ভাবে মানবমনের মুখের উপর সর্বদা জবাব করে— তাই ধ্যানভরে কল্পনাসিদ্ধ হবার চেষ্টা করা যাচ্ছে— কল্পনার কাছ থেকেও পুরো ফল পাওয়া যায় না, কিন্তু সত্যের চেয়ে সে চের বেশি আজ্ঞাবহ! তাই জন্যেই সাধ যায়, ‘সত্য যদি হত কল্পনা’— আমি দুটো যদি এক করতে পারতুম! অর্থাৎ, আমি যদি ঈশ্বর হতে পারতুম! মানুষের মনে ঈশ্বরের মতো অসীম আকাঙ্ক্ষা আছে, কিন্তু ঈশ্বরের মতো অসীম ক্ষমতা নেই— কেউ-বা বলছে আছে, ব’লে বহির্জগতে চেষ্টা করে বেড়াচ্ছে— কেউ-বা জানে নেই, তাই আকাঙ্ক্ষার রাজ্যে বসেই অর্ধনিরাশ্বাস ভাবে কল্পনাপুত্তলী গড়িয়ে তাকে পুজো করছে। একেই বলো ভালোবাসা? আমার ভালোবাসার লোক কই? আমি ভালোবাসি অনেককে— কিন্তু মানসীতে যাকে খাড়া করেছি সে মানসেই আছে, সে আর্টিস্টের হাতে রচিত ঈশ্বরের প্রথম অসম্পূর্ণ প্রতিমা। ক্রমে সম্পূর্ণ হবে কি?