পাতা:মানসী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৬৬

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৬৪
মানসী

কুহুধ্বনি

প্রখর মধ্যাহ্নতাপে  প্রান্তর ব্যাপিয়া কাঁপে
বাষ্পশিখা অনলশ্বসনা।
অন্বেষিয়া দশ দিশা  যেন ধরণীর তৃষা
মেলিয়াছে লেলিহা রসনা।
ছায়া মেলি সারি সারি  স্তব্ধ আছে তিন চারি
সিসুগাছ পাণ্ডুকিশলয়,
নিম্ববৃক্ষ ঘনশাখা  গুচ্ছ গুচ্ছ পুষ্পে ঢাকা—
আম্রবন তাম্রফলময়।
গোলক-চাঁপার ফুলে  গন্ধের হিল্লোল তুলে,
বন হতে আসে বাতায়নে।
ঝাউগাছ ছায়াহীন  নিশ্বসিছে উদাসীন
শূন্যে চাহি আপনার মনে।
দূরান্ত প্রান্তর শুধু  তপনে করিছে ধু ধু,
বাঁকা পথ শুষ্ক তপ্তকায়া—
তারি প্রান্তে উপবন,  মৃদুমন্দ সমীরণ,
ফুলগন্ধ, শ্যামস্নিগ্ধ ছায়া।
ছায়ায় কুটিরখানা  দু ধারে বিছায়ে ডানা
পক্ষীসম করিছে বিরাজ—
তারি তলে সবে মিলি   চলিতেছে নিরিবিলি
সুখে দুঃখে দিবসের কাজ।