পাতা:মানসী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৬৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৬৬
কুহুধ্বনি

তবু সেই চিরকাল  অরণ্যের অন্তরাল
কুহুধ্বনি ধ্বনিছে পঞ্চমে।
যেন কে বসিয়া আছে  বিশ্বের বক্ষের কাছে,
যেন কোন্ সরলা সুন্দরী—
যেন সেই রূপবতী  সংগীতের সরস্বতী
সম্মোহনবীণা করে ধরি—
সুকুমার কর্ণে তার  ব্যথা দেয় অনিবার
গণ্ডগোল দিবসে নিশীথে,
জটিল সে ঝঞ্ঝনায়  বাঁধিয়া তুলিতে চায়
সৌন্দর্যের সরল সংগীতে।
তাই ওই চিরদিন  ধ্বনিতেছে শ্রান্তিহীন
কুহুতান, করিছে কাতর—
সংগীতের ব্যথা বাজে,  মিশিয়াছে তার মাঝে
করুণার অনুনয়স্বর!

কেহ ব’সে গৃহমাঝে  কেহ বা চলেছে কাজে,
কেহ শোনে, কেহ নাহি শোনে—
তবুও সে কী মায়ায়  ওই ধ্বনি থেকে যায়
বিশ্বব্যাপী মানবের মনে।
তবু যুগ-যুগান্তর  মানবজীবনস্তর
ওই গানে আর্দ্র হয়ে আসে।
কত কোটি কুহুতান  মিশায়েছে নিজ প্রাণ
জীবের জীবন ইতিহাসে।