পাতা:মানুষের ধর্ম্ম - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০০
মানুষের ধর্ম্ম

একদিকে সমস্ত মানুষের স্মৃতিলোক। মানুষ জন্মগ্রহণ করে সমস্ত পৃথিবীতে, জন্মগ্রহণ করে নিখিল ইতিহাসে।

 তার তৃতীয় বাসস্থান আত্মিকলোক। সেটাকে বলা যেতে পারে সর্ব্বমানবচিত্তের মহাদেশ। অন্তরে অন্তরে সকল মানুষের যোগের ক্ষেত্র এই চিত্তলোক। কারো চিত্ত হয়ত-বা সঙ্কীর্ণ বেড়া দিয়ে ঘেরা, কারো-বা বিকৃতির দ্বারা বিপরীত। কিন্তু একটি ব্যাপক চিত্ত আছে যা ব্যক্তিগত নয় বিশ্বগত। সেটির পরিচয় অকস্মাৎ পাই। একদিন আহ্বান আসে। অকস্মাৎ মানুষ সত্যের জন্যে প্রাণ দিতে উৎসুক হয়। সাধারণ লোকের মধ্যেও দেখা যায়, যখন সে স্বার্থ ভোলে, যেখানে সে ভালবাসে, নিজের ক্ষতি ক’রে ফেলে। তখন বুঝি—মনের মধ্যে একটা দিক আছে যেটা সর্ব্বমানবের চিত্তের দিকে।

 বিশেষ প্রয়োজনে ঘরের সীমায় খণ্ডাকাশ বদ্ধ কিন্তু মহাকাশের সঙ্গে তার সত্যকার যোগ। ব্যক্তিগত মন আপন বিশেষ প্রয়োজনের সীমায় সঙ্কীর্ণ হলেও তার সত্যকার বিস্তার সর্ব্বমানবচিত্তে। সেইখানকার প্রকাশ আশ্চর্য্যজনক। একজন কেউ জলে পড়ে গেছে আর একজন জলে ঝাঁপ দিলে তাকে বাঁচাবার জন্যে। অন্যের প্রাণরক্ষার জন্যে নিজের প্রাণ সঙ্কটাপন্ন করা। নিজের সত্তাই যার একান্ত সে বলবে আপনি বাঁচলে বাপের