পাতা:মানুষের ধর্ম্ম - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মানুষের ধর্ম্ম
২১

যা আমাদের দৃষ্টির ক্ষেত্রে সকল ভৌতিক জিনিষকে প্রকাশ করে, দাঁড়ালো তা এমন কিছুর প্রকাশ যা সম্পূর্ণই ভৌতিক-ধর্ম্মের অতীত, কেবল ব্যবহারে মাত্র জানা যায় যে তাতে নানা ছন্দের ঢেউ খেলে। কিন্তু প্রবাহণের গণনা থামে না। খবর আসে, কেবল তরঙ্গধর্ম্মী বললে আলোর চরিত্রের হিসাব পূরো মেলে না, সে কণিকাবর্ষীও বটে। এই সব স্ববিরোধী কথা মানুষের সহজ বুদ্ধির সহজ ভাষার সীমার বাইরেকার কথা। তবু বোধতীতের ডুবজলেও মানুষ ভয় পেলে না। পাথরের দেয়ালটাকেও বললে বিদ্যুৎকণার নিরন্তর নৃত্য। সন্দেহ করলে না যে, হয়তো বা পাগল হয়ে গেছি। মনে করলে না, হয়তো প্রজ্ঞা, যাকে বলে reason, সে মানস-সার্কাসের ডিগ্‌বাজি-খেলোয়াড়, সব জিনিষকে একবারে উল্‌টিয়ে ধরাই তার ব্যবসা। পশুরা যদি বিচারক হোত মানুষকে বলত জন্ম-পাগল। বস্তুত মানুষের বিজ্ঞান সব মানুষকে এক-পাগলামিতে-পাওয়া জীব বলে প্রমাণ করচে। বলচে, সে যাকে যে-রকম জানচে বলে মনে করে সেটা একেবারেই তা নয়, সম্পূর্ণই উল্‌টো। জন্তুরা নিজেদের সম্বন্ধে এ রকম লাইবেল প্রচার করে না। তাদের বোধের কাছে যেটা-যা সেটা-তাই অর্থাৎ তাদের কাছে কেবল আছে তথ্য, তাদের অবিচলিত নিষ্ঠ প্রতীয়মানের প্রতি।