পাতা:মানুষের ধর্ম্ম - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মানুষের ধর্ম্ম
২৫

তার বাসস্থান কেবল কাজ চলাবার জন্যে নয়, বড়োকে প্রকাশ করবার জন্যে। এমন-কিছুকে প্রকাশ যাকে সে বলে থাকে মানুষের প্রকাশ, জীবযাত্রাতেও যে-প্রকাশে ন্যূনতা ঘটলে মানুষ লজ্জিত হয়। সেই তার বাড়তি ভাগের প্রকাশ নিয়ে মানুষের যেমন দুঃসাধ্য প্রয়াস এমন তার সাধারণ প্রয়োজন মেটাবার জন্যও নয়। মানুষের মধ্যে যিনি বড়ো আছেন আহারে বিহারেও পাছে তাঁর অসম্মান হয় মানুষের এই এক বিষম ভাবনা।

ঋজু হয়ে চলতে গিয়ে প্রতি মুহূর্ত্তেই মানুষকে ভারাকর্ষণের বিরুদ্ধে মান বাঁচিয়ে চলতে হয়। পশুর মতো চলতে গেলে তা করতে হোত না। মনুষ্যত্ব বাঁচিয়ে চলাতেও তার নিয়ত চেষ্টা, পদে পদেই নীচে পড়বার শঙ্কা। এই মনুষ্যত্ব বাঁচানোর দ্বন্দ্ব মানবধর্ম্মের সঙ্গে। পশুধর্ম্মের দ্বন্দ্ব অর্থাৎ আদর্শের সঙ্গে বাস্তবের। মানুষের ইতিহাসে এই পশুও আদিম। সে টানচে তামসিকতায়, মূঢ়তার দিকে। পশু বলচে সহজধর্ম্মের পথে ভোগ করো, মানুষ বলচে, মানবধর্ম্মের দিকে তপস্যা করো। যাদের মন মন্থর, যারা বলে, যা আছে তাই ভালো, যা হয়ে গেছে তাই শ্রেষ্ঠ, তারা রইল জন্তুধর্ম্মের স্থাবর বেড়াটার মধ্যে, তারা মুক্ত নয়, তারা স্বভাব থেকে ভ্রষ্ট। তারা পূর্ব্বসঞ্চিত ঐশ্বর্য্যকে বিকৃত করে, নষ্ট করে।