পাতা:মানুষের ধর্ম্ম - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২
মানুষের ধর্ম্ম

অর্থ হতে হীন হয়ে গেছে। তেমনি একান্তভাবে প্রেয়কে অবলম্বন করলে মানুষ বলতে যা বোঝায় সেই সত্য হীন হয়ে যায়। নিজের মধ্যে সর্ব্বকালীন বিশ্বভূমীন মনুষ্যধর্ম্মের উপলব্ধিই সাধুতা, হীনতা সেই মহামানবের উপলব্ধি থেকে বিচ্যুত হওয়া। প্রাকৃতিক স্বভাবের উপরেও মানুষের আত্মিক স্বভাব যদি না থাকত তাহলে এ সব কথার অর্থ থাকত না।

ডিমের মধ্যেই পাখীর প্রথম জন্ম। তখনকার মতো সেই ডিমটাই তার একমাত্র ইদং। আর কিছুই সে জানে না। তবু তার মধ্যে একটা প্রবর্ত্তনা আছে বাইরের অজানার মধ্যে সার্থকতার দিকে। সেই সার্থকতা নেদং যদিদমুপাসতে। যদি খোলাটার মধ্যেই একশো বছর সে বেঁচে থাকত তাহলে সেটাকেই বলা যেত তার মহতী বিনষ্টি।

মানুষের সাধনাও এক স্বভাব থেকে স্বভাবান্তরের সাধনা। ব্যক্তিগত সংস্কার ছাড়িয়ে যাবে তার জিজ্ঞাসা তবেই বিশ্বগতজ্ঞানে প্রতিষ্ঠিত হবে তার বিজ্ঞান। ব্যক্তিগত স্বার্থ ও জড় প্রথাগত অভ্যাস কাটিয়ে যাবে তার প্রয়াস তবেই বিশ্বগত কর্ম্মের দ্বারা সে হবে বিশ্বকর্ম্মা। অহঙ্কারকে ভোগাসক্তিকে উত্তীর্ণ হবে তার প্রেম, তবেই বিশ্বগত আত্মীয়তায় মানুষ হবে মহাত্মা। মানুষের একটা স্বভাবে আবরণ অন্য স্বভাবে মুক্তি।