পাতা:মানুষের ধর্ম্ম - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মানুষের ধর্ম্ম
৬৯

আর এক দিকে স্বার্থসীমাবদ্ধ জীবমানব, এই উভয়ের সামঞ্জস্য-চেষ্টাই মানবমনের নানা অবস্থা অনুসারে নানা আকারে প্রকারে ধর্ম্মতন্ত্ররূপে অভিব্যক্ত। নইলে কেবল সুবিধা অসুবিধা প্রিয় অপ্রিয় প্রবল থাকত জৈবিক ক্ষেত্রে জীবধর্ম্মে; পাপ পুণ্য কল্যাণ অকল্যাণের কোনো অর্থই থাকত না।

 মানুষের এই যে কল্যাণের মতি এর সত্য কোথায়? ক্ষুধাতৃষ্ণার মতো প্রথম থেকেই আমাদের মনে তার বোধ যদি পূর্ণ থাকত তাহলে তার সাধনা করতে হ’ত না। বলব বিশ্বমানবমনে আছে। কিন্তু সকল মানুষের মন সমষ্টীভূত হয়ে বিশ্বমানবমনের মহাদেশ সৃষ্ট, এ কথা বলব না। ব্যক্তিমন বিশ্বমনে আশ্রিত কিন্তু ব্যক্তিমনের যোগফল বিশ্বমন নয়। তাই যদি হ’ত তাহলে যা আছে তাই হ’ত একান্ত, যা হতে পারে তার জায়গা পাওয়া যেত না। অথচ যা হয়নি, যা হ’তে পারে মানুষের ইতিহাসে তারি জোর তারি দাবী বেশি। তারি আকাঙ্ক্ষা দুর্নিবার হয়ে মানুষের সভ্যতাকে যুগে যুগে বর্ত্তমানের সীমা পার করিয়ে দিচ্চে। সেই আকাঙ্ক্ষা শিথিল হোলেই সত্যের অভাবে সমাজ শ্রীহীন হয়।

 দ্বিতীয় প্রশ্ন এই যে আমার ব্যক্তিগত মনে সুখদুঃখের যে-অনুভূতি সেটা বিশ্বমনের মধ্যেও সত্য কিনা। ভেবে দেখলে দেখা যায় অহংসীমার মধ্যে যে সুখদুঃখ, আত্মার