পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/১২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
১২০
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী

হত হন। পরন্তু সিরাজ আলিবর্দীর অত্যন্ত প্রিয়পাত্র বলিয়া, যাহাতে তিনি অক্ষত শরীর থাকেন, তজ্জন্য রাজা জানকীরামকে বিশিষ্টরূপ সতর্কতা অবলম্বন করিতে হইয়াছিল। সিরাজ জানিতেন যে, এইরূপ চাপল্যে নানারূপ বিপদ ঘটিবার সম্ভাবনা; তথাপি স্নেহবশে লুৎফ উন্নেসাকে ছাড়িয়া যাইতে পারেন নাই। এইরূপ অনেক দৃষ্টান্ত দেখিতে পাওয়া যায়।

 আমরা লুৎফ উন্নেসার প্রতি সিরাজের প্রগাঢ় ভালবাসার উল্লেখ করিলাম। এক্ষণে সেই আলোকসামান্যা মহিলার উচ্চহৃদয়ের পবিচয় প্রদান করিতেছি। আলিবর্দীর মৃত্যুর পর ইংরেজদেগের সহিত সংঘর্ষ উপস্থিত হইলে, সিরাজ কাশীমবাজার কুঠি অবরোধ করিয়া তাহার অধ্যক্ষ ওয়াটস সাহেবকে সপরিবারে বন্দী করিয়া মুর্শিদাবাদে লইয়া আসেন। সিরাজ-জননী ওয়ার্টুস সাহেবের পত্নী ও পুত্রকন্যাদিগকে নিজ মহলে ৩৭ দিবস পর্যন্ত সযত্নে রক্ষা করেন। তাহার পর লুৎফ উন্নেসার সহিত পরামর্শ করিয়া তাহাদিগকে জলপথে চন্দননগরের ফরাসী শাসনকর্তার নিকট পাঠাইয়া দেন। বলা বাহুল্য, সিরাজ তাহা জানিতে পারিলে তাহাদিগের লাঞ্ছনার একশেষ হইত। কিন্তু রমণী ও বালক-বালিকার দুঃখ তাহদের হৃদয়কে এরূপ অভিভূত করিয়া ফেলিয়াছিল যে, তাঁহারা সিরাজের ক্লোধের পাত্রী হইতেও কুষ্ঠিতা হন নাই। কেবল তাহাই নহে, লুৎফ উন্নেসা সিরাজের নিকট ওয়াটুস সাহেবেরও মুক্তির জন্য ভিক্ষা চাহিয়াছিলেন। তিনি সিরাজকে সানুনয়ে বলিয়াছিলেন,— “কুঠিয়াল সাহেব আপনারই প্রজা ও আপনারই সন্তান। আপনি সন্তানকে ব্যথা প্রদান করিতেছেন কেন? সামান্য একজন ইংরেজ প্রজাকে বন্দী করিয়া রাখা, বঙ্গরাজ্যের অধীশ্বরের কদাচ উচিত নহে।” ওয়াটুসের মুক্তির জন্য লুৎফ উন্নেসা নবাব সিরাজউদ্দৌলার পদতলে নিপতিত হইলেন। নবাব তাহাকে বুঝাইয়া দিলেন যে, ওয়াটসকে বন্দী করিলে, কলিকাতার ইংরেজ বণিকেরা সংযতভাবে কার্য করবে। কিন্তু সেই উদার-হৃদয়ার অশ্রুপাতের সহিত কাতর প্রার্থনোক্তি শুনিয়া সিরাজ অবশেষে ওয়াটুসকে মুক্তি প্রদান করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন।<ref>"Parochial Annals of Bengal"—H. B. Hyde, p. 158.</red>

 এ সকল সিরাজের সৌভাগ্য-সময়ের কথা। আমরা তাহার দুর্ভাগ্য-সময়ে লুৎফ উন্নেসা কিরূপ দেব-হৃদয়ের পরিচয় প্রদান করিয়াছিলেন, এক্ষণে তাহারই উল্লেখ করিতেছি।

 নবাব আলিবর্দী খাঁর মৃত্যুর পর সিরাজ বাঙ্গলা বিহার উড়িষ্যার সিংহাসনে আরোহণ করেন। কিন্তু দৈবদুবিপাকে তাঁহার রাজ্যপ্রাপ্তির পূর্ব হইতেই তাহার

কৃতকার্য হন নাই; আরও আধ ফুটের আবশ্যক হইয়াছিল। গুজরাটদেশজাত এই বলীবর্দ দুইটি দেখিতে তুষারশ্বেত ও অত্যন্ত শান্তপ্রকৃতি ছিল। বারশত টাকায় তাহার ক্রীত হয়। (Mutaqherin, Wol. I, Notes, p. 615).