পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/২২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২১৮
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী


পত্র পাইয়া ক্লাইবকে লিখিয়া পাঠাইলেন যে, পূর্বে বর্ধমান ও নদীয়ার রাজস্ব মুর্শিদাবাদে পাঠাইবার কথা হয়; এক্ষণে হুগলীতে পাঠাইবার জন্য নন্দকুমার বর্ধমানরাজের নিকট অন্যায়পূর্বক পিয়াদা পাঠাইতেছে এবং তাহার পত্রে অবগত হইলাম যে, বর্ধমান ও নদীয়ার রাজস্ব আদায়ের জন্য আপনি তাহাকে খেলাত প্রদান করিয়াছেন। ক্লাইব তাহার প্রত্যুত্তরে লিখিয়া পাঠান যে, নন্দকুমারকে নদীয়া ও বর্ধমানের রাজস্বসংগ্রহের জন্য কাউন্সিলের সভ্যগণ নিযুক্ত করিয়াছেন এবং তাহারাই তাহাকে প্রকাশ্যভাবে খেলাত দিয়াছেন। বর্ধমান ও নদীয়ার রাজস্ব হুগলীতে পাঠাইবার জন্য স্থির করা হইয়াছে। বর্ধমান ও নদীয়া হইতে যে আমরা এত টাকা পাইয়া থাকি, তাহা নবাবকে জানিতে না দেওয়াই মুশিদাবাদে টাকা না প্রেরণ করার উদ্দেশ্য। সেইজন্য হুগলীতে প্রেরণ করাই স্থির হয়। আপনি বর্ধমানরাজকে নন্দকুমারের আদেশ প্রতিপালন করিতে ও র্তাহাকে কলিকাতায় আসিতে লিখিয়া পাঠাইবেন। ১৬ হেস্টিংস ক্লাইবকে পুনর্বার লিখিয়া পাঠাইলেন যে, নন্দকুমার মহিষাদলে গোমস্তার হিসাব তলব করিয়াছে। আমার বিশ্বাস, এ সমস্ত আপনাদের ৰিন অনুমতিতেই হইতেছে। বোধ করি, আপনাদের এরূপ বিবেচনা হইবে না যে, যতদিন নন্দকুমার নিজের অবসরব্রুমে আমার হস্ত হইতে সমস্ত কার্যের ভার গ্রহণ না করিবে, ততদিন পর্যন্ত আমাকে তাহার কার্যের জন্য মোরাদবাগে অবস্থিতি করিতে হইবে। ক্লাইব ইহার কি উত্তর দেন, তাহা আমরা জ্ঞাত নহি। কিন্তু হেস্টিংস ক্লাইবকে নন্দকুমারের উপর নবাবের বিরক্তির কারণ লিখিয়া পাঠাইলে, ক্লাইব র্তাহাকে লেখেন যে, ইংরেজদেগের প্রতি অনুরক্তি ও রায়দুর্লভের পক্ষ অবলম্বন করায়, নবাব নন্দকুমারের উপর অসন্তুষ্ট হইয়াছেন, অন্য কোনই কারণ নাই। হেস্টিংস নন্দকুমারের প্রভুত্ব খর্ব করিতে চেষ্টা করায় এবং ক্লাইব ক্ৰমাগত সমর্থন করিতে থাকায়, নন্দকুমারের প্রতি হেস্টিংসের ক্লোধ দিন দিন বধিত হইয় উঠে।

 ক্লাইবের বিলাতযাত্রার পর ভান্সিটার্টসাহেব কলিকাতার গবর্নর হইয়া আসেন। তিনি প্রথমতঃ নন্দকুমারের কার্যদক্ষতার জন্য র্তাহার উপর সস্তুষ্ট হন। কিন্তু এতদ্দেশীয় ইংরেজদেগের কুপরামর্শে ক্রমে নন্দকুমারের প্রতি বিদ্বেষ উপস্থিত হয়। হেস্টিংস ভান্সিটার্টসাহেবের একজন পরমবন্ধু ছিলেন, সুতরাং নন্দকুমারের প্রতি বিদ্বেষ জন্মাইতে তিনি যে একজন প্রধান সহায় ছিলেন, এরূপ অনুমান করা নিতান্ত অসঙ্গত নহে। ভান্সিটার্ট আসিয়া বৃদ্ধ মীরজাফরকে পদচ্যুত করিয়া মীর কাসেমকে বাঙ্গলী, বিহার, উড়িষ্যার মসনদে বসাইলেন। মীর কাসেমের রাজত্বকালে শাহজাদা আলি গওহর (পরে সম্রাট শাহ আলম), বিহার আক্রমণপূর্বক ইংরেজ ক্ষমতা দূরীভূত করিয়া, সমস্ত বঙ্গরাজ্য আপনার অধিকারে আনয়নের চেষ্টা করেন। মীর কাসেম সেই সময়ে বিহারে অবস্থিতি করিতেছিলেন।

 ১৬ Glieg's Memoirs of W. Hastings, Vol. I, pp. 64-65.