পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৩৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
দেবীসিংহ
৩৪৫

নিদ্রা হইতে উখিত হইয়া দেখিলেন যে, দেবীসিংহ তাহাদের ও তাহাদের প্রভু কোম্পানীর উভয়েরই সর্বনাশসাধনে উদ্যত হইয়াছে। জঘন্য আমোদ-প্রমোদে তুলাইয়া, তাহাদিগকে পশুরও অধম করিয়া তুলিয়াছে এবং কোম্পানীর সর্বনাশ করিয়া নিজের উদর পরিপূর্ণ করিয়াছে। তাহাদিগকে নিজ কর্তব্য হইতে দূরে রাখিয়া, নিজের ইচ্ছামত সমস্ত কার্যই সম্পন্ন করিয়াছে। তখন তাঁহারা দেবীসিংহের ঘোরতর চাতুরী বুঝিতে পারিয়া, তাহাকে পদচ্যুত করিতে কৃতসংকল্প হইলেন। যখন দেবীসিংহ বুঝিতে পারিলেন যে, তাহার উর্ধ্বতন কর্মচারিগণ তাহার প্রতারণা বুঝিতে পারিয়াছেন, তখন তিনি তাহাদিগকে অনুনয়-বিনয়ে শান্ত করিতে চেষ্টা করিতে লাগিলেন। অবশেষে স্বীয় সঞ্চিত অগাধ অর্থের প্রলোভন দেখাইয়া তাহাদিগকে বশীভূত করিতে ইচ্ছা করিলেন। তিনি প্রত্যেককে ভিন্ন ভিন্ন রূপে এবং সকলকে। এক সঙ্গে নানারূপ অর্থের প্রলোভন দেখাইতে লাগিলেন। কিন্তু এবার তাহার সকল কৌশল ব্যর্থ হইল। সমিতির সভ্যগণ একবাক্যে তাহার উৎকোচ অগ্রাহ্য করিলেন।

 কিন্তু দেবীসিংহ কিছুতেই বিচলিত হইবার লোক নহেন। তিনি তলে তলে হেস্টিংসসাহেবকে বশীভূত করিয়া ফেলিলেন। হেস্টিংস নিজেও বুঝিতে পারিয়াছিলেন যে, দেবীসিংহ যে অর্থ সঞ্চয় করিতেন, তাহার কতক অংশ তাহার নিজের হস্তগত হইবেই হইবে। তাই দেবীসিংহকে পদচ্যুত করা দূরে থাকুক, তিনি অচিরকালমধ্যে মুর্শিদাবাদ প্রাদেশিক সমিতি ভঙ্গ করিবার আদেশ দিলেন। দেবীসিংহের জন্য তিনি কোম্পানীর ক্ষতি করিতেও বুটি করিলেন না। স্বদেশীয় কর্মচারিগণকে অবমানিত করিয়া এবং দেশের যাবতীয় লোকের অনুনয় উপেক্ষা করিয়া, হেস্টিংস দেবীসিংহকে রক্ষা করিতে প্রস্তুত হইলেন। যে কোম্পানীর প্রতিনিধিস্বরূপ হইয়া তিনি ভারতশাসন করিতেছিলেন, সেই কোম্পানীর লাভালাভের দিকে কিছুমাত্র দৃষ্টি করিলেন না। যে তাহাকে অর্থ দিয়া বশীভূত করিতে পারিত, তিনি তাহার পরিপোষক হইয়া, ন্যায়, ধর্ম, সমস্তই অকাতরে বিসর্জন দিতে পারিতেন। হেস্টিংস মুর্শিদাবাদ প্রাদেশিক সমিতি ভঙ্গ করিলেন, অথচ দেবীসিংহকে একটু সামান্য তিরস্কার পর্যন্তও করিলেন না। দেবীসিংহকে কোনরূপ দণ্ড দেওয়া দূরে থাকুক, তাহাকে পুনর্বার দিনাজপুর, রঙ্গপুর, ইদ্রাকপুর প্রভৃতির ইজারা প্রদান করিয়া, দিনাজপুরের নাবালক রাজার দেওয়ান নিযুক্ত করিয়া দিলেন। এই দিনাজপুর প্রদেশই দেবীসিংহের অত্যাচারের প্রধান রঙ্গভূমি।

 গঙ্গাগোবিন্দ সিংহ প্রবন্ধে উল্লিখিত হইয়াছে যে, দিনাজপুরের রাজা বৈদ্যনাথ প্রাণত্যাগ করায়, তাহার দত্তক পুত্র রাধানাথ ও ভ্রাতা কান্তনাথের মধ্যে বিষয়প্রাপ্তি লইয়া গোলযোগ উপস্থিত হয়। অবশেষে গঙ্গাগোবিন্দ সিংহের পরামর্শে সকাউন্সিল গবর্নর জেনারেল রাধানাথকেই উত্তরাধিকারী স্থির করেন। এই সময়ে রাধানাথের বয়স ৫৬ বৎসর মাত্র; সুতরাং তাহার অভিভাবকস্বরূপ হইয়া দিনাজপুরের জমিদারী পরিচালনের জন্য কোন উপযুক্ত ব্যক্তির প্রয়োজন হইল। গঙ্গাগোবিন্দ সিংহ তৎকালে