পাতা:যশোহর-খুল্‌নার ইতিহাস দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩২৬ যশোহর-খুলনার ইতিহাস সত্য সত্যই প্রকাপ্তভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করিলেন। মহারাজ প্রতাপাদিত্য এইবার মহাসমারোহে নূতন করিয়া রাজতক্তে বসিলেন। রাজস্থয় যজ্ঞের মত এক বিরাট ব্যাপার অনুষ্ঠিত হইল ; কত সমধৰ্ম্মী রাজন্ত ও জমিদার, কত সহৃদয় আত্মীয় স্বজন আসিয়া আনন্দোৎসবে ও পরামর্শ সভায় যোগ দিলেন। বহুদিন ধরিয়া যশোহরপুরী আনন্দলহরীতে আত্মহারা হইয়া রহিল। স্বাধীনতা ঘোষণা করা কত বিপদ-সম্বুল এবং মোগল শক্ৰ কত সমব নিপুণ, প্রতাপ সকলকে তাহা বুঝাইয়া দিলেন ; সকলে সমবেত ন হইলে দেশমাতৃকার সমুদ্ধার হইবে ন, প্রতাপের পরাজয়ে প্রতাপের কি হইবে ? হইবে দেশের সর্বনাশ, ইহাই যেন সকলে বুঝিরা যান। আমরা পূৰ্ব্বে বলিয়াছি, এই সময়ে প্রতাপ কল্পতরু হইয়া অপরিমিত অর্থ লুটাইয়া দিয়াছিলেন, (২৩৯ পৃ: ) এবং দানের স্রোতে সকলের ভক্তিপ্রতি সমাকৰ্ষণ করিয়া ধন্ত হইয়াছিলেন। কথিত আছে, প্রতাপাদিত্য এই সময়ে নিজ নামে মুদ্র প্রচারিত করেন। কোনও রাজার পক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণার এমন নিদর্শন আর নাই। কিন্তু একান্ত দুঃখের বিষয় আমি বহু বৎসর একাণ্ডিক চেষ্টার ফলেও এই মুদ্রার একটিও দেখিতে পাই নাই, সে কথা পূৰ্ব্বে বলিয়াছি ( ৫২ পূ: ) । এজন্য কোন প্রকার চেষ্টা, অমুসন্ধান, অর্থব্যয় বা সময়ক্ষেপে কাতর হই নাই। লোকমুখে শুনি, প্রতাপাদিত্যের ত্রিকোণ মুদ্র ছিল। চতুষ্কোণ, অষ্টকোণ, গোলাকার বা ডিম্বাকার প্রভৃতি নানা আকারের মুদ্রার কথা জানি, কিন্তু অন্য কেহ ত্রিকোণ মুদ্র প্রচার করিয়াছিলেন বলিয়া শুনি নাই। তবে প্রতাপাদিত্যের ত্রিকোণ মুদ্রা থাকা বিচিত্র নহে ; তিনি ত্রিকোণ মন্দির, ত্রিকোণ পুকুর বা পুষ্পাধার রচনা করিয়াছিলেন ( ১৩৬-৭ পৃ: ) ; বিশেষত্বের জন্য বা তান্ত্রিকতার খাতিরে তিনি ক্রিকোণ মুদ্রাও প্রস্তুত করাইতে পারেন। র্তাহার পতনের পর এদেশে মোগলের এরূপভাবে তাহার কীৰ্ত্তিস্থতি বা স্বাধীনতার চিহ্ন বিলুপ্ত করিয়াছিল বে, সে সময়ে হয়তঃ বিশুদ্ধ রৌপ্যের মুদ্রাগুলি কতক লুষ্ঠিত হইয়া নষ্ট হইয়াছিল, কতক লোকে ভয়ে বাহির করিতে ন পারিয়া গলাইয়া গহনা গড়িয়াছিল বা মাটর গর্তে পুতিয়া রাখিয়াছিল। হয়তঃ কোনদিন দৈবাৎ এরূপ মুদ্র বাহির হইয়া পড়িতে পারে। কিন্তু তবুও যতদিন তাহ চক্ষে না দেখিব, ততদিন তাহার অস্তিত্ত্বে আম্বা করিতে বা অন্তকে বিশ্বাস করিবার জন্তু বলিতে পারি না।