পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

যাবার সংকল্প করছেন। ভারতবর্ষে এঁকে আমি জানতুম। ইনি বাংলা শিক্ষা করে অনেক ভালাে বাংলা বই গুজরাটিতে তর্জমা করেছেন। এঁর স্ত্রীপুত্র পরিবার কিছুই নেই। ভ্রমণ করা, শিক্ষা করা এবং স্বদেশীয় সাহিত্যের উন্নতি সাধন করা এঁর একমাত্র কাজ। লােকটি অতি নিরীহ, শীর্ণ, খর্ব, পৃথিবীতে অতি অল্প পরিমাণ স্থান অধিকার করেন। এঁকে দেখে আমার আশ্চর্য বােধ হয়।

 ৬ অক্টোবর। এখনাে আমাদের প্রবাসের সময় উত্তীর্ণ হয় নি, কিন্তু আমি আর এখানে পেরে উঠছি নে। বলতে লজ্জা বােধ হয়, আমার এখানে ভালাে লাগছে না। সেটা গর্বের বিষয় নয়, লজ্জার বিষয়— সেটা আমার স্বভাবের ক্রটি।

 যখন কৈফিয়ত সন্ধান করি তখন মনে হয় যে, য়ুরােপের যে ভাবটা আমাদের মনে জাজ্জ্বল্যমান হয়ে উঠেছে সেটা সেখানকার সাহিত্য পড়ে। অতএব সেটা হচ্ছে ‘আইডিয়াল’ য়ুরোপ। অন্তরের মধ্যে প্রবেশ না করলে সেটা প্রত্যক্ষ করবার যাে নেই। তিন মাস, ছ মাস কিম্বা ছ বৎসর এখানে থেকে আমরা য়ুরোপীয় সভ্যতার কেবল হাত-পা নাড়া দেখতে পাই মাত্র। বড়াে বড়াে বাড়ি, বড়াে বড়াে কারখানা, নানা আমােদের জায়গা। লােক চলছে ফিরছে, যাচ্ছে আসছে, খুব একটা সমারােহ। সে যতই বিচিত্র যতই আশ্চর্য হােক-না কেন, তাতে দর্শককে শ্রান্তি দেয়; কেবলমাত্র বিস্ময়ের আনন্দ চিত্তকে পরিপূর্ণ করতে পারে না, বরং তাতে মনকে সর্বদা বিক্ষিপ্ত করতে থাকে।

 অবশেষে এই কথা মনে আসে— আচ্ছা, ভালাে রে বাপু, আমি মেনে নিচ্ছি তুমি মস্ত শহর, মস্ত দেশ, তােমার ক্ষমতা এবং ঐশ্বর্যের সীমা নেই। আর অধিক প্রমাণের আবশ্যক নেই। এখন আমি

১০৬