পাতা:যাত্রাবদল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ডানপিটে SeG কিন্তু ধীরে ধীরে তাহার মনে হইতে লাগিল-কাশী, তাহার সে চল্লিশ বছর আগেকার কাশীকে সে যেন খুজিয়া পাইতেছে না, সে কাশী কোথায় গেল ? এ কাশীকে তো সে চেনে না । গণেশ-মহলায় পুরাতন সঙ্গীদের সন্ধান কেহ জানে না, কেবল রামজীবন বাবুর মেজোছেলে পতিতপাবন পৈতৃক বাটীতে এখনও বাস করিতেছে। পতিতপাবন সতীশকে দেখিয়াই চিনিতে পারিল । বলিল, সতীশ-দা, তোমার চেহারা তো এখনো বেশ আছে! আমারও ধরে এই বাষট্টি হোল, আমি তোমার চেয়ে বুড়ো হয়ে গেছি-মানে, অম্বলের অসুখে আমার-এতদিন ছিলে কোথায় ? নানা পুরাতন দিনের গল্প হইল। পতিতপাবনের অবস্থা ভাল নয়, ব্যবসায় বার বার ক্ষতিগ্ৰস্ত হইয়া সর্বস্বাস্ত হইতে বসিয়াছিল । তারপর উপরি উপরি দু'টি উপযুক্ত ছেলে মারা গিয়াছে। ছোট ছেলেটি রেশমের কাপড়ের ব্যবসা করে বিশ্বনাথের গলির মধ্যে-তাতেই কোনোরকমে চলে। ভাইগুলির মধ্যে কেবল ছোট ভাইটি বাচিয়া আছে, পাটনাতে শ্বশুর-বাড়ী বাস বঁাধিয়াছিল, বহুদিন হইল সেখানেই আছে । সন্ধ্যাবেলা সতীশ দশাশ্বমেধ ঘাটে চুপ করিয়া বসিল। সম্মুখের হাসিমাখা, কত অজানা তরুণ মুখ-গান-আনন্দের উচ্ছাস-দিব্যেন্দুর কথা মনে পড়িল । দিব্যেন্দু বলিয়াছিল--দাদা, আমি চাকুরি করলে তোমার ভাবনা থাকবে না। দিব্যেন্দু জানে না যে, তাহার দাদা লুকাইয়া কাশী চলিয়া আসিয়াছে। এই দশাশ্বমেধ ঘাটে, এই সন্ধ্যাবেলা যেন প্ৰত্যেক বালককেই মনে হইতে লাগিল দিব্যেন্দু। দিব্যেন্দু না সে পঞ্চান্ন বছর আগেকার নিজে ? আন্নাকালীর মুখ মনে পড়িল-যখন গরুর গাড়ীর পাশে দাড়াইয়া ঘরের চাবিটা তার হাতে দিয়াছিল, সে সময়কার তার ছলছল চোখ দু'টি মনে পড়িল ।