পাতা:রক্তকরবী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(tషిO তৃতীয়— শক্তিদেবীর কাছে অসংখ্য বলির মধ্যে রঞ্জনও কখন প্রাণ হারালো । তখন আর সইল না, নন্দিনী উঠল রুদ্রাণী হয়ে। জাল থেকে বেরোলো রাজা, অন্তহীন সংগ্রহের মোহ গেল তার ছুটে । বিদ্রোহ ঘোষণা করলে নিজেরই বিরুদ্ধে। মুক্তির প্রবল আবেগ, ধ্বংসের প্রচণ্ড ঝটিকা, নিরুদ্ধ শক্তির বিরাট ভূকম্পনের মধ্যে যক্ষপতির জয়যাত্রা শুরু হল নন্দিনীর হাতে হাত রেখে। মৃত্যুর তোরণদ্বার উত্তীর্ণ হয়ে। ভেঙে পড়ল যক্ষপুরীর সেই ধ্বজদণ্ড যা পৃথিবীর মৰ্ম্মকেন্দ্র বিদ্ধ করে দাড়িয়েছিল। আকাশে ছিন্নভিন্ন একটা গন্ধৰ্ব্ব নগরীর মতো মিলিয়ে গেল যক্ষপুরী হাওয়ায় হাওয়ায়। যে কবর থেকে উঠেছিল সেই পুরী, সেই কবরেই তলিয়ে গেল বিরাট মিথ্যা— ভাঙন আঁকড়ে দাঁড়িয়ে রইল একটিমাত্র রক্তকরবী গাছ। সবুজপাতার ছায়া শুকনো মাটিতে মেলে দিয়ে। ‘রক্তকরবী'র অভিনয় সংক্রান্ত আরও কিছু তথ্য এখানে স্মরণ করা যেতে পারে। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় -প্রকাশিত ‘রবীন্দ্রনাথের চিঠি/ পারুল দেবীকে/' (প্রকাশন বিভাগ, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়, ১ম প্রকাশ শ্রাবণ ১৩৯৪, আগস্ট ১৯৮৭) শীর্ষক গ্রন্থের ‘স্মৃতিচারণ, তৃতীয় অধ্যায় থেকে প্রাসঙ্গিক অংশ উদ্ধৃত করা গেল : “কবি একদিন বললেন আমার সেজদাকে “ওহে আমি যে তোমাদের বাড়ি একদিন বেড়াতে যেতে চাই।” এ সৌভাগ্যে আমরা দিশাহারা হয়ে গেলাম। বললাম, আমরা আপনাকে নিয়ে যাব, বলুন কবে যাবেন ? কারণ তার দুদিন পরেই প্রশান্তদার বাড়িতে কবির ‘রক্তকরবী অভিনয় হবে, আমরাও আসবো । কিন্তু কবি সেই দিনটিই স্থির করলেন আমাদের বাড়িতে আসবার । (পৃ. ৭২) “গানবাজনা হল, কবি তাঁর নানা দেশ ভ্রমণের কথা বললেন। কিছুক্ষণ পরে পরে বরফ থেকে ফল বার করে, রস করে কবিকে দেওয়া হতে লাগল। কোথা দিয়ে যে তিন ঘণ্টা কেটে গেল বোঝা গেল না । কমে কবির ফিরে যাওয়ার সময় হল । সন্ধ্যায় রক্তকরবী অভিনয় হবে। (পৃ. ৭২) “কবি ফিরে গেলেন— সঙ্গে আমার দাদারা । আমরা সন্ধ্যায় গিয়েছিলাম এবং ‘রক্তকরবী দেখেছিলাম। মনে আছে, সেদিন কবিকে নিয়ে, গাড়ী নিয়ে, গাড়ীবারান্দার নীচে পৌঁছানো মাত্র প্রচণ্ড শিলাবৃষ্টি হয়েছিল।” (পৃ. ৭৩) ‘রক্তকরবী'র অভিনয় দেখার পর রবীন্দ্রনাথের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে কোনো তথ্য অবশ্য আমরা পাই না। কেবল হেমন্তবালা দেবীকে একটি চিঠিতে (৭এপ্রিল ১৯৩৪) তিনি এই ইঙ্গিতপূর্ণ বাক্যটি লিখেছিলেন : ‘কাল রক্তকরবী অভিনয় থেকে শ্রাত্ত দেহে ক্লান্ত মনে জোড়াসাঁকোয় ফিরে তোমার প্রেরিত ফল ও মিষ্টান্নের অর্ঘ্য দেখে খুসি হয়েছি .. ' (চিঠিপত্র ৯, পৃ. ২২৭) ৮ সমাপ্তিসূচক মন্তব্য : ১৯৭৮ সালে রক্তকরবী'র পাঠভেদ সংস্করণ প্রস্তুতির কাজে হাত দিয়েছিলুম। দীর্ঘ কুড়ি বছর এই কাজটিতে মগ্ন থেকে অবশেষে তা শেষ করলুম ১৯৯৮ সালে। এই কাজের শুরুতে আমার পাথেয় ছিল প্রয়াত পুলিনবিহার সেনের আনুকূল্য অনুপ্রেরণা ও আশীর্বাদ। দুঃখ এই, তাঁকে কাজটি দেখাবার সুযোগ নেই। তাঁর উদ্দেশে