পাতা:রবীন্দ্রনাথ - অজিতকুমার চক্রবর্তী (১৯৬০).pdf/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সহযোগেই তবে সৌন্দর্যের তরীটিকে সত্যের পথে ঠিক বিনা বিপদে চালনা করা সম্ভবপর হয়।

 আমি জানি কড়ি ও কোমলের অনেকগুলি কবিতা এবং ‘চিত্রাঙ্গদা’ কাহারও কাহারও কাছে ইন্দ্রিয়াসক্তির কাব্য বলিয়া নিন্দনীয় হইয়াছে। উক্ত কাব্যদ্বয়ে ভোগের সুর যে কিছুমাত্র লাগে নাই তাহা আমি বলি না, কিন্তু সেই সুরই উহাদের মধ্যে একান্ত নহে। বরং তাহাকে চরম স্থান না দিবার এবং তাহার সীমা নির্ণয় করিয়া দেখাইবার একটি ভাব ঐ দুই কাব্যের মধ্যে প্রবল। চিত্রাঙ্গদার রূপটা যে বাহিরের জিনিস, ক্ষণিক বসন্তের প্রদত্ত একটি অস্থায়ী সৌভাগ্যের মতো, তাহা বিশেষ করিয়া নাট্যের মধ্যে ঘটাইবার একটু উদ্দেশ্য আছে। বাহ্যিক রূপ এবং অন্তরের মানুষ এ দুয়ের দ্বন্দ্ব যে কি প্রবল তাহা আর কোনো উপায়ের দ্বারাই দেখানো যাইত না। আমি তো বরং মনে করি যে, চিত্রাঙ্গদা কাব্যখানি সৌন্দর্যকে বাহিরের দিক হইতে ভোগের একটা মস্ত প্রতিবাদ। ইহাতে ভোগকে যেমন উজ্জ্বল বর্ণে আঁকা হইয়াছে, ভোগের অবসাদকে এবং শূন্যতাকেও তেমনি করিয়া দেখানো হইয়াছে।

সংসার-পথের
পান্থ, ধুলিলিপ্ত বাস, বিক্ষত চরণ,
কোথা পাব কুসুমলাবণ্য, দুদণ্ডের
জীবনের অকলঙ্ক শোভা!

 সেই সমস্ত অসম্পূর্ণতা-খণ্ডতার মধ্যেই প্রেমের যে ‘এক সীমাহীন অপূর্ণতা অনন্ত মহৎ’ বিদ্যমান, সেই জায়গাটাতেই কি জোর দিয়া বাহ্য সৌন্দর্যের মায়াময় আবরণকে কবি চিত্রাঙ্গদায় ছিন্ন করিয়া ফেলেন নাই?

 কড়ি ও কোমলের শেষের দিকেও ভোগকে একেবারে দলিত

৩৯