পাতা:রবীন্দ্রনাথ - অজিতকুমার চক্রবর্তী (১৯৬০).pdf/৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

করিয়া ফেলিয়া খণ্ডতার বাধাকে বিদীর্ণ করিয়া বাহির হইতে বাধ্য হয়। কড়ি ও কোমলে ও মানসীতে আমরা সেই ছবিই দেখিয়া আসিয়াছি।

 অথচ অংশের মধ্যেই সম্পূর্ণতার তত্ত্ব নিহিত হইয়া আছে। শারীরিক সৌন্দর্য সেইজন্য অনির্বচনীয়; মানবপ্রেম অনির্বচনীয়, কবি কোথাও বিস্ময়ের অন্ত পান না, তাঁহার কাছে সমস্তই ‘রহস্যময়ের পূজা।’

 সমস্ত অংশকে খণ্ডকে অসম্পূর্ণকে যখন সেই পরিপূর্ণ সমগ্রের মধ্যে অখণ্ড করিয়া উপলব্ধি করা যায়, তখন বেশ বুঝিতে পারা যায় যে, সব বিচিত্রতা এক জায়গায় গিয়া মিলিয়াছে, সব ভাঙাচোরা এক জায়গায় অক্ষত সুন্দর হইয়া আছে। আমাদের জীবনের মধ্যে এই দ্বিতীয় জীবন এই অন্তরতর জীবনকে কি কোনো শুভ মুহূর্তে আমরা অনুভব করি নাই? নহিলে এত বার বার আঘাত কিসের জন্য? যেখানেই বিচ্ছিন্নতা সেখানেই ক্রন্দন। সেই কান্না যে কবির সমস্ত জীবন ভরিয়া। সেই পরিপূর্ণ সব-মেলানো আনন্দময় গভীরতর জীবন সৃষ্টির মধ্যেই বিষাদের অশ্রুলীলাও এমন সুমধুর হইয়া ফুটিয়াছে। সেই পূর্ণ জীবন যাঁহার অখণ্ড আনন্দ অনুভূতির মধ্যে রহিয়াছে তিনিই জীবনদেবতা।

 আমি জানি এ জিনিসটা অনেকের কাছে মিস্টিসিজম্ বা হেঁয়ালি। কিন্তু খণ্ডের মধ্যে সম্পূর্ণতার বোধটাই একটা হেঁয়ালি, যদিচ হিগেলীয় দর্শনশাস্ত্র এবং আমাদের বৈষ্ণব ভেদাভেদ দর্শনশাস্ত্র সেই তত্ত্বটিকেই প্রমাণ করিবার জন্য বিধিমতে প্রয়াস পাইয়াছে। যাহারা বিশুদ্ধ অদ্বৈতবাদী তাহারা একমাত্র শুদ্ধবুদ্ধমুক্ত অখণ্ড সত্য আছেন এই কথা স্বীকার করিয়া থাকে এবং আমরা যে নানা নাম ও রূপের মধ্যে সকল জিনিসকে বিচিত্র করিয়া দেখি তাহাকে মায়া বলে, ভ্রম বলে। অথচ

৫১