পাতা:রবীন্দ্রনাথ - অজিতকুমার চক্রবর্তী (১৯৬০).pdf/৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বিচ্ছিন্ন এক-একটি সুর, আর-একজন অখণ্ড রাগিণী। এই দুইই এক— ইহাদের মধ্যে সত্যকার কোনো বিচ্ছেদ নাই। রাগিণীর মধ্যে যেমন সুর অবিচ্ছেদে রহিয়াছে, চিরন্তন জীবনের মধ্যে ক্ষণিক জীবন তেমনিই রহিয়াছে।

 সেইজন্যই জীবনে বাল্যের সেই বিশ্বজগতের পরমরহস্যময় অনুভূতি সেই শরতের প্রত্যুষে সূর্যোদয় হইতে-না-হইতে বাড়ির বাগানে গিয়া উপস্থিত হওয়া, কি যেন একটা আশ্চর্য নূতনত্ব উদ্ঘাটিত হইবে ভাবিয়া আনন্দ, সেই ঘাসের উপর ফোঁটা ফোঁটা শিশির এবং বাগানের ভিজে গন্ধ এবং তাহারই উপরে অজস্রবিস্তীর্ণ কাঁচা সোনালি শরতের রৌদ্রের অনির্বচনীয় মোহ— এ অনুভূতির সুর সেই সাক্ষিজীবনের সেই চিরন্তনজীবনের অখণ্ড রাগিণীর মধ্যে রহিয়া গিয়াছে। বাল্য তাঁহারই মধ্যে পূর্ণ হইয়া আছে।

অয়ি মোর জীবনের প্রথম প্রেয়সী,
মোর ভাগ্যগগনের সৌন্দর্যের শশী,
মনে আছে, কবে কোন্ ফুল্লযুথীবনে,
বহুবাল্যকালে, দেখা হত দুই জনে
আধো-চেনাশোনা? তুমি এই পৃথিবীর
প্রতিবেশিনীর মেয়ে, ধরার অস্থির
এক বালকের সাথে কি খেলা খেলাতে
সখী, আসিতে হাসিয়া তরুণ প্রভাতে
নবীন বালিকামূর্তি, শুভ্র বস্ত্র পরি’
উষার কিরণধারে সদ্য স্নান করি’
বিকচ কুসুমসম ফুল্ল মুখখানি
নিদ্রাভঙ্গে দেখা দিতে, নিয়ে যেতে টানি

৫৪