পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘরে-বাইরে ۹ود মক্ষীরানী কোনো জবাব না দিয়ে হেসে লাল হয়ে চলে যাবার উদযোগ করতেই আমি বললুম, না, সে হবে না,—আপনি বসে বসে পড়ুন। আমি একখানা বই ফেলে গিয়েছিলুম সেটা নিয়েই দৌড় দিচ্ছি। আমার বইখান টেবিল থেকে তুলে নিলুম। বললুম, ভাগ্যে এ বই আপনার হাতে পড়ে নি তাহলে আপনি হয়তো আমাকে মারতে আসতেন । মক্ষী বললে, কেন ? আমি বললুম, কেননা, এ কবিতার বই নয়। এতে যা আছে সে একেবারে মামুষের মোটা কথা, খুব মোটা করেই বলা, কোনোরকম চাকুরী নেই। আমার খুব ইচ্ছে ছিল এ বইট। নিখিল পড়ে । একটুখানি ক্রকুঞ্চিত করে মক্ষী বললে, কেন বলুন দেখি ? আমি বললুম, ও যে পুরুষমানুষ, আমাদেরই দলের লোক। এই স্থল জগৎটাকে ও কেবলই ঝাপসা করে দেখতে চায় সেইজপ্তেই ওর সঙ্গে আমার ঝগড়া বাধে। আপনি তো দেখছেন সেই জন্যেই আমাদের স্বদেশী ব্যাপারটাকে ও লংফেলোর কবিতার মতো ঠাউরেছে—যেন ফি-কথায় মধুর ছন্দ বাচিয়ে চলতে হবে, এইরকম ওর মতলব । আমরা গদ্যের গদা নিয়ে বেড়াই, আমরা ছন্দ-ভাঙার দল । মক্ষী বললে, স্বদেশীর সঙ্গে এ বইটার যোগ কী ? আমি বললুম, আপনি পড়ে দেখলেই বুঝতে পারবেন। কী স্বদেশ কী অন্ত সব বিষয়েই নিখিল বানানো কথা নিয়ে চলতে চায় তাই পদে পদে মানুষের যেটা স্বভাব তারই সঙ্গে ওর ঠোকাঠুকি বাধে, তখন ও স্বভাবকে গাল দিতে থাকে –কিছুতেই এ-কথাটা ও মানতে চায় না যে, কথা তৈরি হবার বহু আগেই আমাদের স্বভাৰ তৈরি হয়ে গেছে—কথা থেমে যাবার বহু পরেও আমাদের স্বভাব বেঁচে থাকবে । মক্ষী খানিকক্ষণ চুপ করে রইল, তার পরে গম্ভীরভাবে বললে, স্বভাবের চেয়ে বড়ো হতে চাওয়াটাই কি আমাদের স্বভাব নয় ? আমি মনে মনে হাসলুম—ওগো ও রানী, এ তোমার আপন বুলি নয়, এ নিখিলেশের কাছে শেখা। তুমি সম্পূর্ণ স্বস্ব প্রকৃতিস্থ মানুষ, স্বভাবের রসে দিব্যি টসটস করছ ; যেমনি স্বভাবের ডাক শুনেছ, অমনি তোমার সমস্ত রক্তমাংস সাড়া দিতে শুরু করেছে—এতদিন এরা তোমার কানে যে মন্ত্র দিয়েছে সেই মায়ামন্ত্ৰজালে তোমাকে ধরে রাখতে পারবে কেন ? তুমি যে জীবনের আগুনের তেজে শিরায় শিরায় জলছ আমি কি জানি নে ? তোমাকে সাধুকথার ভিজে গামছা জড়িয়ে ঠাও রাখৰে षग्नि कडिििन ?