পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՅԵ-օ রবীন্দ্র-রচনাবলী আশা-আকাঙ্ক্ষা, তার সমস্ত জীবনের সমষ্টি আর কোথাও থাকছে না কেবল সাহিত্যে থাকছে। সংগীতে চিত্রে বিজ্ঞানে দর্শনে সমস্ত মানুষ নেই। এইজন্তেই সাহিত্যের এত আদর। এইজন্তেই সাহিত্য সর্বদেশের মকুন্তত্বের অক্ষয় ভাণ্ডার । এইজন্তেই প্রত্যেক জাতি আপন আপন সাহিত্যকে এত বেশি অনুরাগ ও গর্বের সহিত রক্ষা করে । আমার এক-একবার আশঙ্কা হচ্ছে তুমি আমার উপর চটে উঠবে—বলবে, লোকটাকে কিছুতেই তর্কের লক্ষ্যস্থলে আনা যায় না। আমি বাড়িয়ে কমিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কেবল নিজের মতটাকে নানা রকম করে বলবার চেষ্টা করছি ; প্রত্যেক পুনরুক্তিতে পূর্বের কথা কতকটা সম্মার্জন পরিবর্তন করে চলা যাচ্ছে— তাতে তর্কের লক্ষ্য স্থির রাখা তোমার পক্ষে শক্ত হয়ে দাড়াচ্ছে। কিন্তু তুমি পূর্ব হতেই জান, খণ্ড খণ্ড ভাবে তর্ক করা আমার কাজ নয়। সমস্ত মোট কথাটা গুছিয়ে না উঠতে পারলে আমি জোর পাই নে। মাঝে মাঝে স্বতীক্ষ সমালোচনায় তুমি যেখানটা ছিন্ন করছ সেখানকার জীর্ণতা সেরে নিয়ে দ্বিতীয়বার আগাগোড়া ফেদে দাড়াতে হচ্ছে।—তার উপর আবার উপমার জালায় তুমি বোধ হয় অস্থির হয়ে উঠেছ। কিন্তু আমার এ প্রাচীন রোগটিও তোমার জানা আছে। মনের কোনো একটা ভাব ব্যক্ত করবার ব্যাকুলত জন্মালে আমার মন সেগুলোকে উপমার প্রতিমাকারে সাজিয়ে পাঠায়—অনেকটা বকাবকি বাচিয়ে দেয়। অক্ষরের পরিবর্তে হাইরোগ্লিফিক্স ব্যবহারের মত। কিন্তু এ-রকম রচনাপ্রণালী অত্যন্ত বহুকেলে ; মনের কথাকে সাক্ষাৎভাবে ব্যক্ত না করে প্রতিনিধি দ্বারা ব্যক্ত করা । এ-রকম করলে যুক্তিসংসারের আদানপ্রদান পরিষ্কাররূপে চালানো অসম্ভব হয়ে ওঠে। ধা হ’ক, আগে থাকতে দোষ স্বীকার করছি তাতে যদি তোমার মনস্তুষ্টি হয় । তুমি লিখেছ, আমার সঙ্গে এ তর্ক তুমি মোকাবিলায় চোকাতে চাও। তাহলে আমার পক্ষে ভারি মুশকিল। তাহলে কেবল টুকরো নিয়েই তর্ক হয়, মোট কথাটা আজ থেকে মৃত্যুকাল পর্যন্ত তোমাকে বোঝাতে পারি নে। নিজের অধিকাংশ মতের সঙ্গে নিজের প্রত্যক্ষ পরিচয় থাকে না। তারা যদিচ আমার আচারে ব্যবহারে লেখায় নিজের কাজ নিজে করে যায় কিন্তু আমি কি সকল সময়ে তাদের খোজ রাখি ? এইজন্তে তর্ক উপস্থিত হলে বিনা চুটিসে অকস্মাৎ কাউকে ডাক দিয়ে সামনে তলব করতে পারি নে—নামও জানি নে, চেহারাও চিনি নে। লেখবার একটা স্ববিধে এই যে, আপনার মতের সঙ্গে পরিচিত হবার একটা অবসর পাওয়া যায়, লেখার সঙ্গে সঙ্গে আমনি নিজের মতটাকে যেন স্পর্শদ্বারা অনুভব করে যাওয়া