পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ললাটের লিখন SG?\9) “শোনো, বলি, সোেমশংকর নয় প্রধান নায়ক এ কথা মনে রেখো।” “তই না কি। তা হলে অন্তত গল্পের ঘাট পর্যন্ত এগিয়ে দাও, তার পরে সাঁতরে হােক খেয়া ধরে হােক পারে পৌঁছব।” “এ খবরটা বোধ হয় আগে থাকতেই জান, যে, মুক্তারাম তরুণসমাজে বিনােমইনের মাস্টারি করে থাকেন, বাছাই করে নেন। ছাত্র। ছাত্রী পেতে পারতেন অসংখ্য- কিন্তু তাদের সম্বন্ধে বাছাই করার রীতি এত কড়া যে এতদিনে একটিমাত্র পেয়েছেন, তারই নাম সূষমা QF ” “যাদের ত্যাগ করেছেন তাদের কী দশা!” “তাদের মধ্যে আত্মহত্যার সংখ্যা কত, খবর পাইনি। কিন্তু এ জানি, তাদের অনেকেই চক্ষু মেলে চাদের পানে তাকিয়ে থাকে।” । “সেই চকোরীর দলে তুমি নাম লেখাও নি বাঁশি?” “তোমার কী মনে হয়?” “আমার মনে হয় চকোরী নও, তুমি মিসেস রাহুর পদ পাবার উমেদার। তুমি যাকে নেবে তাকে আগাগোড়া দেবে আত্মসাৎ করে, চক্ষু মেলে চেয়ে থাকা নয়।” “ধন্য! সাধু, চরিত্রচিত্রে তুমি হবে বাংলাদেশে প্রথমশ্রেণীর প্রথম। গোল্ডমেডালিস্ট। পর্যন্ত— তোমার দৃষ্টি দেখছি কোনো বাধা মানে না।” হাতজোড় করে পৃথীশ— বললে, “বন্দনা। সারা হল, এবার পালা শুরু করে।” “এটা কি এখনো আন্দাজ করতে পার নি যে, সুষম ওই মুক্তারাম সন্ন্যাসীর ভালোবাসায় একেবারে শেষ পর্যন্ত তলিয়ে গিয়েছে।” “ভালোবাসা না ভক্তি?” ‘চরিত্রবিশারদ, এখনো জান না, মেয়েদের যে ভালোবাসা ভক্তিতে পৌঁছয় সেটা তাদের মহাপ্রয়াণ। তার থেকে ফেরবার রাস্তা নেই। মেয়েদের মায়ায় অভিভূত হয়ে সমানক্ষেত্রে যারা ধরা দিয়েছে তারা কেনে ইন্টারমিডিয়েটের টিকিট, কেউ-বা থার্ড ক্লাসের। মেয়েদের কাছে হার মানল না যে, ওদের ভূজপাশের দিগবলয় এড়িয়ে যে উঠল মধ্য গগনে, দুই জোড়হাত উপরে རྒྱུ་། རྒྱུ་མའི་ཊི་ཨ་ মেয়েরা আপন শ্রেষ্ঠদান। দেখ নি কী সন্ন্যাসী যেখানে সেখানে মেয়েদের יץ “আচ্ছা, মানছি তা, কিন্তু উল্টোটাও দেখেছি। মেয়েদের বিষম টান বর্বরের দিকে, তাদের কঠোরতম অপমানে ওরা পুলকিত হয়ে ওঠে, পিছন পিছন রসাতল পর্যন্ত যেতে হয় রাজি।” “তার কারণ মেয়েরা অভিসারিকার জাত, এগিয়ে গিয়ে যাকে চাইতে হয় তার দিকেই ওদের ভালোবাসা। উপেক্ষা তারই পরে দুৰ্বত্ত হবার মতো জোর নেই যার কিংবা দুর্লভ হবার মতো তপস্যা।” “বুঝলুম, ওই সন্ন্যাসীকে ভালোবেসেছে সুষমা।” “কী ভালোবাসা। মরণের বাড়া। কোনো সংকোচ ছিল না। কেননা ঠাউরেছিল একেই বলে ভক্তি। মাঝে মাঝে মুক্তারামকে দূরে যেতে হত। কাজে, তখন সুষমা শুকিয়ে যেত, মুখ হয়ে যেত ফ্যাকাসে, চােখে প্রকাশ পেত জ্বালা, মন শূন্যে শূন্যে খুঁজে বেড়ােত কার দর্শন, পড়াশুনোতে মন দেওয়া হত অসম্ভব। বিষম ভাবনা হল মায়ের মনে। একদিন আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “বাঁশি, কী করি।” আমার বুদ্ধির উপর বিশ্বাস ছিল তখনো। আমি বললেম, “মুক্তারামের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দাও।” শুনে আঁৎকে উঠে বললেন, “এমন কথা ভাবতে পাের কী করে।” তর্ক না করে নিজেই চলে গেলুম মুক্তারামের কাছে। সোজা বললেম, “নিশ্চয় জানেন, সুষমা। আপনাকে অসম্ভবরকম ভালোবাসে, তাকে বিয়ে করে উদ্ধার করুন বিপদ থেকে।” এমন করে তাকালেন