O রবীন্দ্র-রচনাবলী ঈশ্বরচন্দ্ৰ বিদ্যাসাগর \ অকৃত্রিম মনুষ্যত্ব যাঁর চরিত্রে দীপ্তিমান হয়ে দেশকে সমুজ্জ্বল করেছিল, যিনি বিধিদত্ত সম্মান পূর্ণভাবে নিজের অস্তরে লাভ করে জন্মগ্রহণ করেছিলেন আমরা সেই ক্ষণজন্ম পুরুষকে শ্রদ্ধা করবার শক্তি দ্বারাই তার স্বদেশবাসীরূপে তীর গৌরবের অংশ পাবার অধিকার প্রমাণ করতে ৫। জ্যৈষ্ঠ ১৩৪৫ বৈশাখ ১৩৬৮ , ঈশ্বরচন্দ্ৰ বিদ্যাসাগর যে সযত্ন-স্মরণীয় বার্তা সর্বজনবিদিত, তারও পুনরুচ্চারণের উপলক্ষ বারংবার উপস্থিত হয়, যে মহাত্মা বিশ্বপরিচিত, বিশেষ অনুষ্ঠানের সৃষ্টি হয় তাঁরও পরিচয়ের পুনরাবৃত্তির জন্যে। মানুষ আপন দুর্বল স্মৃতিকে বিশ্বাস করে না, মনােবৃত্তির তামসিকতায় স্বজাতির গৌরবের ঐশ্বৰ্য অনবধানে মলিন হয়ে যাবার আশঙ্কা ঘটে, ইতিহাসের এই অপচয় নিবারণের জন্যে সতর্কতা পুণ্যকর্মের অঙ্গ। কেননা কৃতজ্ঞতার দেয় ঋণ যে জাতি উপেক্ষা করে, বিধাতার বরলাভের সে অযোগ্য। যে-সকল অপ্রত্যাশিত দান শুভ দৈবক্রমে দেশ লাভ করে, সেগুলি স্থাবর নয়; তারা প্ৰাণবান, তারা গতিশীল, তাদের মহাৰ্যতা তাই নিয়ে। কিন্তু সেই কারণেই তারা নিরস্তর পরিণতির মুখে নিজের আদি পরিচয়কে ক্ৰমে অনতিগোচর করে তোলে। উন্নতির ব্যবসায়ে মূলধনের প্রথম সম্বল ক্রমশই আপনার পরিমাণ ও প্রকৃতির পরিবর্তন এমন করে ঘটাতে থাকে, যাতে করে তার প্রথম রূপটি আবৃত হয়ে যায়, নইলে সেই বন্ধ্যা টাকাকে লাভের অন্ধ গণ্য করাই যায় না। সেইজনেই ইতিহাসের প্রথম দূরবর্তী দাক্ষিণাকে সুপ্রত্যক্ষ করে রাখবার প্রয়ােজন হয়। পরবর্তী রূপান্তরের সঙ্গে তুলনা করে জানা চাই যে, নিরস্তর অভিব্যক্তির পথেই তাঁর অমরতা, নির্বিকার জড়ত্বের বন্দিীশালায় নয়। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বাংলা সাহিত্যভাষার সিংহদ্বার উদঘাটন করেছিলেন। তীর পূর্ব থেকেই এই তীর্থভিমুখে পথখননের জন্যে বাঙালির মনে আহবান এসেছিল এবং তৎকালীন অনেকেই নানাদিক থেকে সে আহবান স্বীকার করে নিয়েছিলেন। তাদের অসম্পূর্ণ চেষ্টা বিদ্যাসাগরের সাধনায় পূর্ণতার রূপ ধরেছে। ভাষার একটা প্রকাশ মননের দিকে এবং জ্ঞানের তথ্যসংগ্রহের দিকে, অর্থাৎ বিজ্ঞানে তত্ত্বজ্ঞানে ইতিহাসে; আর-একটা প্ৰকাশ ভাবের বাহনরূপে রসসৃষ্টিতে; এই শেষোক্ত ভাষাকেই বিশেষ করে বলা যায় সাহিত্যের ভাষা। বাংলায় এই ভাষাই দ্বিধাহীন মূর্তিতে প্রথম পরিস্ফুট হয়েছে বিদ্যাসাগরের লেখনীতে, তার সত্তায় শৈশব-যৌবনের দ্বন্দ্ব ঘুচে গিয়েছিল। ভাষার অস্তরে একটা প্রকৃতিগত অভিরুচি আছে, সে সম্বন্ধে যাদের আছে সহজ বােধশক্তি, ভাষ্যসৃষ্টি-কার্যে তঁরা স্বতই এই রুচিকে বঁচিয়ে চলেন, একে ক্ষুন্ন করেন না। সংস্কৃতশাস্ত্ৰে বিদ্যাসাগরের ছিল অগাধ পাণ্ডিত্য। এইজন্য বাংলা ভাষার নির্মাণকার্যে সংস্কৃত ভাষার ভাণ্ডার থেকে তিনি যথোচিত উপকরণ সংগ্রহ করেছিলেন। কিন্তু উপকরণের ব্যবহারে তঁর শিল্পীজনােচিত বেদনাবােধ ছিল। তাই তীর আহরিত সংস্কৃত শব্দের সবগুলিই বাংলা ভাষা সহজে
পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
![](http://upload.wikimedia.org/wikisource/bn/thumb/f/f4/%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A7%80%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%B0-%E0%A6%B0%E0%A6%9A%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%B2%E0%A7%80_%28%E0%A6%85%E0%A6%B7%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A6%B6_%E0%A6%96%E0%A6%A3%E0%A7%8D%E0%A6%A1%29_-_%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A6%AD_%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A7%80.pdf/page86-1024px-%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A7%80%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%B0-%E0%A6%B0%E0%A6%9A%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%B2%E0%A7%80_%28%E0%A6%85%E0%A6%B7%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A6%B6_%E0%A6%96%E0%A6%A3%E0%A7%8D%E0%A6%A1%29_-_%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A6%AD_%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A7%80.pdf.jpg)