*價@嘎 8 SS এ কথাটা শুনিয়া আমার মন একটু নরম হইয়াছিল, কিন্তু তর্ক এইখানেই শেষ হয় নাই। ইহার শেষ যেখানে সেটা পরে বর্ণনা করা যাইতেছে । “উদ্দীপনা বলিয়া মাসিক পত্রে ভালো গল্প লিখিবার জন্য পঞ্চাশ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করিয়াছিল। কথা এই স্থির হইল, আমরা দুজনেই সেই কাগজে দুটা গল্প লিখিয়া পাঠাইব, দেখি কাহার ভাগ্যে পুরস্কার জোটে । রাত্রের ঘটনা তো এই। পরদিন প্ৰভাতের আলোকে বুদ্ধি যখন নির্মল হইয়া আসিল তখন দ্বিধা জন্মিতে লাগিল । কিন্তু প্ৰতিজ্ঞা করিলাম, এ অবসর ছাড়িয়া দেওয়া হইবে না- যেমন করিয়া হউক, জিতিতেই হইবে । হাতে তখনো দুই মাস সময় ছিল । প্রকৃতিবাদ অভিধান কিনিলাম, বঙ্কিমের বইগুলাও সংগ্ৰহ করিলাম। কিন্তু বঙ্কিমের লেখা আমার চেয়ে আমার অন্তঃপুরে অধিক পরিচিত, তাই সে মহাদাশ্রয় পরিত্যাগ করিতে হইল। ইংরেজি গল্পের বই দেদার পড়িতে লাগিলাম । অনেকগুলা গল্প ভাঙিয়া-চুরিয়া একটা প্লট দাড় করাইলাম। প্লটটা খুবই চমৎকার হইয়াছিল, কিন্তু মুশকিল। এই হইল, বাংলা-সমাজে সে-সকল ঘটনা কোনো অবস্থাতেই ঘটিতে পারে না । অতিপ্রাচীন কালের পাঞ্জাবের সীমান্তদেশে গল্পের ভিত্তি ফাদিলাম ; সেখানে সম্ভব-অসম্ভবের সমস্ত বিচার একেবারে নিরাকৃত হওয়াতে কলমের মুখে কোনো বাধা রহিল না । উদ্দাম প্রণয়, অসম্ভব বীরত্ব, নিদারুণ পরিণাম সার্কাসের ঘোড়ার মতো আমার গল্প ঘিরিয়া অদ্ভুত রাত্রে আমার ঘুম হইত না ; দিনে আহারকালে ভাতের থালা ছাড়িয়া মাছের ঝোলের বাটিতে ডাল ঢলিয়া দিতাম ! আমার অবস্থা দেখিয়া নিঝরিণী আমাকে অনুনয় করিয়া কহিল, “আমার মাথা খাও, তোমাকে আব্ব গল্প লিখিতে হইবে না- আমি হার মানিতেছি ।” আমি উত্তেজিত হইয়া বলিলাম, “তুমি কি মনে করিতেছ। আমি দিনরাত্রি কেবল গল্প ভাবিয়াই মরিতেছি । কিছুই না । আমাকে মাকেলের কথা ভাবিতে হয়- তোমার মতো গল্প এবং কবিতা চিন্তা করিবার অবসর পডিয়া থাকিলে আমার ভাবনা কী ছিল ।” যাহা হউক, ইংরেজি প্লট এবং সংস্কৃত অভিধানে মিলাইয়া একটা গল্প খাড়া করিলাম। মনের কোণে ধর্মবুদ্ধিতে একটু পীড়াবোধ করিতে লাগিলাম- ভাবিলাম, বেচারা নিঝর ইংরেজি সাহিত্য পড়ে নাই, তাহাব ভাব সংগ্ৰহ করিবার ক্ষেত্র সংকীর্ণ ; আমার সঙ্গে তাহার এই লড়াই নিতান্ত অসমকক্ষের লড়াই । উপসংহার লেখা পাঠানো হইয়াছে। বৈশাখের সংখ্যায় পুরস্কারযোগ্য গল্পটি বাহির হইবে। যদিও আমার মনে কোনো আশঙ্কা ছিল না, তবু সময় যত নিকটবতী হইল, মনটা তত চঞ্চল হইয়া উঠিল । বৈশাখ মাসও আসিল । একদিন আদালত হইতে সকাল-সকাল ফিরিয়া আসিয়া খবর পাইলাম, বৈশাখের ‘উদ্দীপনা আসিয়াছে, আমার স্ত্রী তাহা পাইয়াছে । ধীরে ধীরে নিঃশব্দপদে অন্তঃপুরে গেলাম ! শয়নঘরে উকি মারিয়া দেখিলাম, আমার শ্ৰী কড়ায় আগুন কবিয়া একটা বই পূড়াইতেছে । দেয়ালের আয়নায় নিঝরিণীর মুখের যে প্রতিবিম্ব দেখা যাইতেছে তাহাতে স্পষ্ট বুঝা গেল, কিছু পূর্বে সে অশ্রুবর্ষণ করিয়া লইয়াছে। মনে আনন্দ হইল, কিন্তু সেইসঙ্গে একটু দয়াও হইল। আহা, বেচারার গল্পটি উদ্দীপনায় বাহির হয় নাই । কিন্তু এই সামান্য ব্যাপারে এত দুঃখ ! স্ত্রীলোকের অহংকারে এত অল্পেই ঘা পড়ে ।
পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
![](http://upload.wikimedia.org/wikisource/bn/thumb/3/31/%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A7%80%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%B0-%E0%A6%B0%E0%A6%9A%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%B2%E0%A7%80_%28%E0%A6%8F%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A6%B6_%E0%A6%96%E0%A6%A3%E0%A7%8D%E0%A6%A1%29_-_%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A6%AD_%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A7%80.pdf/page438-1024px-%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A7%80%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%B0-%E0%A6%B0%E0%A6%9A%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%B2%E0%A7%80_%28%E0%A6%8F%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A6%B6_%E0%A6%96%E0%A6%A3%E0%A7%8D%E0%A6%A1%29_-_%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A6%AD_%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A7%80.pdf.jpg)