New (፩oዒ না। “ওরে বাপ আমার !” বলিয়া ভবানীচরণ সেইখানেই মাটিতে বসিয়া পড়িলেন । কালীপদ তাহার বাপের দারিদ্র্য ঘুচাইবে বলিয়াই কলিকাতায় গিয়াছিল, কিন্তু জগৎসংসারে সে এই বৃদ্ধিকে কী একান্ত নিঃসম্বল করিয়াই চলিয়া গেল। বাহিরে বৃষ্টি আরো চাপিয়া আসিল । এমন সময়ে অন্ধকারে ঘাসপাতার মধ্যে পায়ের শব্দ শোনা গেল। ভবানীচরণের বুকের মধ্যে ধড়াস করিয়া উঠিল । যাহা কোনোমতেই আশা করিবার নাহে তাহাও যেন তিনি আশা করিয়া বসিলেন । তাহার মনে হইল কালীপদ যেন বাগান দেখিতে আসিয়াছে। কিন্তু বৃষ্টি যে মুষলধারায় পড়িতেছে- ও যে ভিজিবে, এই অসম্ভব উদবেগে যখন তাহার মনের ভিতরটা চঞ্চল হইয়া উঠিয়াছে এমন সময়ে কে গরাদের বাহিরে তাহার ঘরের সামনে আসিয়া মুহুর্তকালের জন্য দাড়াইল । চাদর দিয়া সে মাথা মুড়ি দিয়াছে- তাহার মুখ চিনিবার জো নাই। কিন্তু সে যেন মাথায় কালীপদারই মতো হইবে। “এসেছিস বাপ” বলিয়া ভবানীচরণ তাড়াতাড়ি উঠিয়া বাহিরের দরজা খুলিতে গেলেন। দ্বার খুলিয়া বাগানে আসিয়া সেই ঘরের সম্মুখে উপস্থিত হইলেন। সেখানে কেহই নাই। সেই বৃষ্টিতে বাগানময় ঘুরিয়া বেড়াইলেন, কাহাকেও দেখিতে পাইলেন না । সেই নিশীথরাত্রে অন্ধকারের মধ্যে দাড়াইয়া ভাঙাগলায় একবার “কালীপদ” বলিয়া চীৎকার করিয়া ডাকিলেন- কাহারও সাড়া পাইলেন না । সেই ডাকে নটু চাকরিটা গোহালিঘর হইতে বাহির হইয়া আসিয়া অনেক করিয়া বৃদ্ধিকে ঘরে লইয়া আসিল । পরদিন সকালে নটু ঘর বঁাট দিতে গিয়া দেখিল, গরাদের সামনেই ঘরের ভিতরে পুঁটুলিতে বাধা একটা কী পড়িয়া আছে। সেটা সে ভবানীচরণের হাতে আনিয়া দিল । ভবানীচরণ খুলিয়া দেখিলেন একটা পুরাতন দলিলের মতো। চশমা বাহির করিয়া চোখে লাগাইয়া একটু পড়িয়াই তিনি তাড়াতাড়ি ছুটিয়া রাসমণির সম্মুখে গিয়া উপস্থিত হইলেন এবং কাগজখানা তাহার নিকট মেলিয়া ধরিলেন । রাসমণি জিজ্ঞাসা করিলেন, “ও কী ও ।” ভবানীচরণ কহিলেন, “সেই উইল ।” রাসমণি কহিলেন, “কে দিল ।” ভবানীচরণ কহিলেন, “কাল রাত্রে সে আসিয়াছিল- সে দিয়া গেছে ।” রাসমণি জিজ্ঞাসা করিলেন, “এ কী হইবে ।” ভবানীচরণ কহিলেন, “আর আমার কোনো দরকার নাই ।” বলিয়া সেই দলিল ছিন্ন ছিন্ন করিয়া ফেলিলেন । w এ সংবাদটা পাড়ায় যখন রটিয়া গেল তখন বগলাচরণ মাথা নাড়িয়া সগর্বে বলিল, “আমি বলি নাই, কালীপদকে দিয়াই উইল উদ্ধার হইবে ?” রামচরণ মুদি কহিল, “কিন্তু দাদাঠাকুর, কাল যখন রাত দশটার গাড়ি এস্টেশনে এসে পৌঁছিল। তখন একটি সুন্দর দেখিতে বাবু আমার দোকানে আসিয়া চৌধুরীদের বাড়ির পথ জিজ্ঞাসা করিল— আমি তাহাকে পথ দেখাইয়া দিলাম । তার হাতে যেন কী একটা দেখিয়াছিলাম ।” 'আরে দূর বলিয়া এ কথাটাকে বগলাচরণ একেবারেই উড়াইয়া দিল । आनि ७७sbr SS OO
পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫২৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
![](http://upload.wikimedia.org/wikisource/bn/thumb/3/31/%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A7%80%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%B0-%E0%A6%B0%E0%A6%9A%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%B2%E0%A7%80_%28%E0%A6%8F%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A6%B6_%E0%A6%96%E0%A6%A3%E0%A7%8D%E0%A6%A1%29_-_%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A6%AD_%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A7%80.pdf/page524-1024px-%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A7%80%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%B0-%E0%A6%B0%E0%A6%9A%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%B2%E0%A7%80_%28%E0%A6%8F%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A6%B6_%E0%A6%96%E0%A6%A3%E0%A7%8D%E0%A6%A1%29_-_%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A6%AD_%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A7%80.pdf.jpg)