পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨8૭ রবীন্দ্র-রচনাবলী হবে, আমি বলি আমাদের সকলকে সন্ন্যাসী হয়ে ভারতবর্ষের দেশে দেশে গ্রামে গ্রামে দেশহিতরত নিয়ে বেড়াতে হবে, আমাদের দলকে পুষ্ট করে তুলতে হবে, আমাদের সভাটিকে স্বল্প সূত্রস্বরূপ করে সমস্ত ভারতবর্ষকে গেথে ফেলতে হবে।” বিপিন হাসিয়া কহিল,"সে ঢের সময় আছে, যা কালই শুরু করা যেতে পারে এমন একটা কিছু কাজ বলে। মারি তো গণ্ডার লুঠি তো ভাণ্ডার যদি পণ করে বস তবে গণ্ডারও বাঁচবে ভাণ্ডারও বাচবে, তুমিও যেমন আরামে আছ তেমনি আরামে থাকবে। আমি প্রস্তাব করি আমরা প্রত্যেকে দুটি করে বিদেশী ছাত্র পালন করব, তাদের পড়াশুনো এবং শরীর-মনের সমস্ত চর্চার ভার আমাদের উপর থাকবে ।” শ্ৰীশ কহিল, “এই তোমার কাজ ! এর জন্যই আমরা সন্ন্যাসধর্ম গ্রহণ করেছি ! শেষকালে ছেলে মানুষ করতে হবে, তা হলে নিজের ছেলে কী অপরাধ করেছে !” বিপিন বিরক্ত হইয়া কহিল, “ত যদি বল তা হলে সন্ন্যাসীর তো কর্মই নেই ; কর্মের মধ্যে ভিক্ষে আর ভ্রমণ অণর ভণ্ডামি ।” শ্ৰীশ রাগিয়া কহিল, “আমি দেখছি আমাদের মধ্যে কেউ কেউ আছেন এ সভার মহৎ উদ্দেশ্যের প্রতি র্যাদের শ্রদ্ধামাত্র নেই, তারা যত শীঘ্র এ সভা পরিত্যাগ করে সন্তানপালনে প্রবৃত্ত হন ততই আমাদের মঙ্গল!” বিপিন আরক্তবর্ণ হইয়া বলিল, “নিজের সম্বন্ধে কিছু বলতে চাইনে কিন্তু এ সভায় এমন কেউ কেউ আছেন যারা সন্ন্যাসগ্রহণের কঠোরতা এবং সস্তানপালনের ত্যাগস্বীকার দুয়েরই অযোগ্য, তাদের—” চন্দ্রমাধববাবু চোখের কাছ হইতে কার্যবিবরণের খাত নামাইয়া কহিলেন, “উত্থাপিত প্রস্তাব সম্বন্ধে পূর্ণবাবুর অভিপ্রায় জানতে পারলে আমার মন্তব্য প্রকাশ করবার অবসর পাই ।” পূর্ণ কহিল, “অদ্য বিশেষরূপে সভার ঐক্যবিধানের জন্য একটা কাজ অবলম্বন করবার প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু কাজের প্রস্তাবে ঐক্যের লক্ষণ কী রকম পরিস্ফুট হয়ে উঠেছে সে আর কাউকে চোখে আঙল দিয়ে দেখাবার দরকার নেই। ইতিমধ্যে আমি যদি আবার একটা তৃতীয় মত প্রকাশ করে বসি তা হলে বিরোধানলে তৃতীয় আহুতি দান করা হবে— অতএব আমার প্রস্তাব এই যে, সভাপতিমশায় আমাদের কাজ নির্দেশ করে দেবেন এবং আমরা তাই শিরোধাধ করে নিয়ে বিনা বিচারে পালন করে য়াব। কার্যসাধন এবং ঐক্যসাধনের এই একমাত্র উপায় আছে।” পাশের ঘরে এক ব্যক্তি আবার এক বার নড়িয়া চড়িয়া বসিল এবং তাহার চাৰি ঝন্‌ করিয়া উঠিল । !