পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী به وی\*6 ‘মন্দিরের কথা’ ১৩১০ সালে, ‘ধৰ্ম্মপদং’ ও ‘বিজয়ী-সন্মিলন ১৩১২ সালে বঙ্গদর্শনে মুত্রিত হয়। ‘বিজয়-সন্মিলন প্রবন্ধ বিজয়াদশমীর পরদিবস বাগবাজারে পশুপতি বস্থ মহাশয়ের গৃহে জাহত সাধারণসন্মিলনসভায় লেখক-কর্তৃক পঠিত হয়। ‘ব্রাহ্মণ ‘চীনেম্যানের চিঠি’ ও ‘ভারতবর্ষের ইতিহাস’ মজুমদার লাইব্রেরির সংস্থষ্ট আলোচনা সমিতির অধিবেশনে পঠিত হয়। তৎকালীন রাজপ্রতিনিধি লর্ড কার্জন কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদবীসন্মানবিতরণTeto offs (‘exaggeration or extravagance' ) প্রাচ্যদেশের বিশেষ প্রবৃত্তি বলিয়া উল্লেখ করেন, ‘অত্যুক্তি’ প্রবন্ধে তাহার জবাব আছে। রবীন্দ্রনাথের রাষ্ট্রনৈতিক মত সম্বন্ধে একখানি গ্রন্থের প্রসঙ্গে (‘রবীন্দ্রনাথের রাষ্ট্রনৈতিক মত? প্রবন্ধে ) ‘অত্যুক্তি প্রবন্ধের আলোচনায় কবি লিখিয়াছেন— ইতিমধ্যে কার্জন লাটের হুকুমে দিল্লির দরবারের উদ্যোগ হল । তখন রাজশাসনের তর্জন স্বীকার করেও আমি তাকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছিলুম। সেই প্রবন্ধ যদি হলে আমলের পাঠকের পড়ে দেখেন তবে দেখবেন, ইংরেজের সঙ্গে ভারতবাসীর রাষ্টিক সম্বন্ধের বেদনা ও অপমানটা ষে কোথায় আমার সেই লেখায় কতকটা প্রকাশ করেছি। আমি এই বলতে চেয়েছিলুম, দরবার জিনিসটা প্রাচ্য— পাশ্চাত্য কর্তৃপক্ষ যখন সেটা ব্যবহার করেন তখন তার যেটা শূন্তের দিক সেইটিকেই জাহির করেন, যেটা পূর্ণের দিক সেটাকে নয়। প্রাচ্য অনুষ্ঠানের প্রাচ্যত কিসে? সে হচ্ছে দুই পক্ষের মধ্যে আত্মিক সম্বন্ধ স্বীকার করা। তরবারির জোরে প্রতাপের যে সম্বন্ধ সে হল বিরুদ্ধ সম্বন্ধ, আর প্রভূত দাক্ষিণ্যের দ্বারা যে সম্বন্ধ সেইটেই নিকটের। দরবারে সম্রাট আপন অজস্র ঔদার্ধ প্রকাশ করবার উপলক্ষ্য পেতেন ; সেদিন তার দ্বার অবারিত, র্তার দান অপরিমিত। পাশ্চাত্য নকল দরবারে সেই দিকটাতে কঠিন কৃপণতা, সেখানে জনসাধারণের স্থান সংকীর্ণ, পাহারাওয়ালার অস্ত্রে শস্ত্রে রাজপুরুষদের সংশয়বুদ্ধি কণ্টকিত— তার উপরে এই দরবারের ব্যয়বহনের ভার দরবারের অতিথিদেরই পরে। কেবলমাত্র নতমস্তকে রাজার প্রতাপকে স্বীকার করবার জন্যেই এই দরবার। উৎসবের সমারোহ -দ্বারা পরস্পরের সম্বন্ধের অন্তর্নিহিত অপমানকেই আড়ম্বর করে বাইরে প্রকাশ করা হয়। এই কৃত্রিম হৃদয়হীন আড়ম্বরে প্রাচ্য হৃদয় অভিভূত হতে পারে এমন কথা চিস্তা করার মধ্যেও অবিমিশ্র ঔদ্ধত্য এবং প্রজার প্রতি অপমান। ভারতবর্ষে ইংরেজের প্রভূত্ব তার আইনে, তার মন্ত্ৰগৃহে, তাঁর শাসনতন্ত্রে, ব্যাপ্তভাবে আছে, কিন্তু সেইটেকে উৎসবের আকার দিয়ে উৎকট করে তোলার কোনো প্রয়োজন মাত্রই নেই। .