পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२39रै রবীক্স-রচনাবলী দুঃসাধ্য হত। কিন্তু এই সংসারকর্ম তার পক্ষে কর্মযোগ। এই কর্মের দ্বারাই তিনি স্বামীর সঙ্গে বিচিত্রভাবে মিলিত হচ্ছেন । আমাদের কর্মক্ষেত্র এই কর্মযোগের যদি তপোবন হয় তবে কর্ম আমাদের পক্ষে বন্ধন হয় না। তাহলে, সতী স্ত্রী যেমন কর্মের দ্বারাই কর্মকে উত্তীর্ণ হয়ে প্রেমকে লাভ করেন আমরাও তেমনি কর্মের দ্বারাই কর্মের সংসারকে উত্তীর্ণ হয়ে— মৃত্যুং তীত্ব4– অমৃতকে লাভ করি । এইজন্যই গৃহস্থের প্রতি উপদেশ আছে তিনি ষে ষে কাজ করবেন তা নিজেকে যেন নিবেদন না করেন—তা করলেই কর্ম তাকে নাগপাশে বাধবে এবং ঈর্ষাম্বেষ লোভক্ষোভের বিষনিঃশ্বাসে তিনি জর্জরিত হতে থাকবেন, তিনি—যদ্যং কৰ্ম প্রকুবীত তদব্ৰহ্মণি সমৰ্পয়েৎ—যে ষে কর্ম করবেন সমস্ত ব্ৰহ্মকে সমর্পণ করবেন। তাহলে, সতী গৃহিণী যেমন সংসারের সমস্ত ভোগের অংশ পরিত্যাগ করেন অথচ সংসারের সমস্ত ভার অপ্রান্ত যত্বে বহন করেন—কারণ কর্মকে তিনি স্বার্থসাধনরূপে জানেন না আনন্দসাধনরূপেই জানেন—আমরাও তেমনি কর্মের আসক্তি দূর করে কর্মের ফলাকাঙ্ক্ষা বিসর্জন করে, কর্মকে বিশুদ্ধ আনন্দময় করে তুলতে পারব—এবং ষে আনন্দ আকাশে না থাকলে—কোহেবান্তাং কং প্রাণ্যাং—কেই বা কিছুমাত্র চেষ্টা করত, কেই বা প্রাণ ধারণ করত । জগতের সেই সকল চেষ্টার অাকর পরমানন্দের সঙ্গে আমাদের সকল চেষ্টাকে যুক্ত করে জেনে আমরা কোনোকালেও এবং কাহা হতেও ভয়প্রাপ্ত হব না। ২৭ পৌষ শক্তি জ্ঞান, প্রেম ও শক্তি এই তিন ধারা যেখানে একত্র সংগত সেইখানেই আনন্দতীর্থ। আমাদের মধ্যে জ্ঞান, প্রেম ও কর্মের যে পরিমাণে পূর্ণ মিলন সেই পরিমাণেই আমাদের পূর্ণ আনন্দ । বিচ্ছেদ ঘটলেই পীড়া উৎপন্ন হয় । এইজন্যে কোনো একটা সংক্ষেপ উপায়ের প্রলোভনে যেখানে আমরা ফাকি দেব সেখানে আমরা নিজেকেই ফাকি দেব । যদি মনে করি দ্বারীকে ডিঙিয়ে রাজার সঙ্গে দেখা করব তাহলে দেউড়িতে এমনি আমাদের লাঞ্ছনা হবে যে, রাজদর্শনই দুঃসাধ্য হয়ে উঠবে। যদি মনে করি নিয়মকে বর্জন করে নিয়মের উর্ধ্বে উঠব তাহলে কুপিত নিয়মের হাতে আমাদের দুঃখের একশেষ হবে। বিধানকে সম্পূর্ণ স্বীকার করে তবেই বিধানের মধ্যে আমাদের কর্তৃত্ব জন্মে। গৃহের যে কর্তা হতে চায় গৃহের সমস্ত নিয়ম সংযম তাকেই সকলের চেয়ে বেশি মানতে হয়— সেই স্বীকারের দ্বারাই সেই কর্তৃত্বের অধিকার লাভ করে।