পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সেই অন্তরের নিভৃত জাঙ্গমের সঙ্গে আমাদের পরিচয় সাধন করতে হবে। জামরা । বাইরেকেই অত্যন্ত বেশি করে জানি, অপ্তরের মধ্যে আমাদের ধাতায়াত প্রায় নেই, সেই জন্তেই আমাদের জীবনের ওজন নষ্ট হয়ে গেছে । অর্থাৎ আমরা নিজের সমস্ত শক্তিকে বাইরেই অহরহ এই ষে নিঃশেষ করে ফতুর হয়ে যাচ্ছি—বাইরের সংশ্ৰব পরিহার করাই তার প্রতিকার নয়, কারণ মানুষকে ছেড়ে মাকুষকে চলে যেতে বলা, রোগের চেয়ে চিকৎসাকে গুরুতর করে তোলা। এর যথার্থ প্রতিকার হচ্ছে ভিতরের দিকেও আপনার প্রতিষ্ঠা লাভ করে অন্তরে বাহিরে নিজের সামঞ্জস্ত স্থাপন করা । তাহলেই জীবন সহজেই নিজেকে উন্মত্ত অপব্যয় থেকে রক্ষা করতে পারে। নইলে একদল ধর্মলুৱ লোককে দেখতে পাই তারা নিজের কথাকে, হাসিকে, উদ্যমকে কেবলই মানদও হাতে করে হিসাবি কৃপণের মতো খর্ব করছে । তারা নিজের বরাদ্ধ যতদূর কমানো সম্ভব তাই কমিয়ে নিজের মকুন্যত্বকে কেবলই শুক কৃশ আনন্দহীন করাকেই সিদ্ধির লক্ষণ বলে মনে করছে। কিন্তু এমন করলে চলবে না। আর যাই হ’ক মানুষকে সম্পূর্ণ সহজ হতে হবে উদামভাবে বেহিসাবি হলেও চলবে না, কৃপণভাৰে হিসাবি হলেও চলবে না । এই মাঝখানের রাস্তায় দাড়াবার উপায় হচ্ছে, বাহিরের লোকালয়ের মধ্যে থেকেও অস্তরের নিভৃত নিকেতনের মধ্যে নিজের প্রতিষ্ঠা রক্ষা করা। বাহিরই আমাদের একমাত্র নয় অন্তরেই আমাদের গোড়াকার আশ্রয় রয়েছে তা বারংবার সকল আলাপের মধ্যে, আমোদের মধ্যে, কাজের মধ্যে অনুভব করতে হবে। সেই নিতৃত ভিতরের পথটিকে এমনি সরল করে তুলতে হবে যে, যখন-তখন ঘোরতর কাজকর্মের গোলযোগেও ধর্ণ করে সেইখানে একবার ঘুরে আসা কিছুই শক্ত হবে না। সেই যে আমাদের ভিতরের মহলটি আমাদের জনতাপূর্ণ কলরবমুখর কাজের ক্ষেত্রের মাঝখানে একটি অবকাশকে সর্বদা ধারণ করে আছে বেষ্টন করে আছে, এই অবকাশ তো কেবল শূন্তত নয়। তা স্নেহে প্রেমে আনন্সে কল্যাণে পরিপূর্ণ। সেই অবকাশটিই হচ্ছেন তিনি ধার দ্বারা উপনিষৎ জগতের সমস্ত কিছুকেই আচ্ছন্ন দেখতে বলেছেন। ঈশাবাস্তমিদং সৰ্বং বংকিঞ্চ জগত্যাং জগৎ। সমস্ত কাজকে বেষ্টন করে সমস্ত মানুষকে বেষ্টন করে সর্বত্রই সেই পরিপূর্ণ অবকাশটি আছেন ; তিনিই পরস্পরের যোগসাধন করছেন এবং পরস্পরের সংঘাত নিবারণ করছেন। সেই তাকেই নিতৃত চিত্তের মধ্যে নির্জন অবকাশঙ্কপে নিরঙ্কর উপলব্ধি করবার অভ্যাস করে, শাস্তিতে মঙ্গলে ও প্রেমে নিবিড়ভাবে পরিপূর্ণ অবকাশরুপে তাকে ফয়ের মধ্যে সর্বদাই জানো। যখন হালছ খেলছ কাজ করছ তখনও একবার সেখানে মেতে