পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ᏔᏍ8Ꮤ2 রবীন্দ্র-রচনাবলী আনাও-না। কাশীতে র্তাহার আর তার মা'র তো খুব নাম শোনা যায়। একবার তাকে দেখিাই-না।” রোগীকে দেখিবার জন্য ডাক্তার আসিল এবং ডাক্তারকে দেখিবার জন্য শৈল ব্যস্ত হইয়া উঠিল । কহিল, “কমল, আয়, শীঘ আয় ।” নবীনকালীর বাড়ি যে কমলা নলিনাক্ষকে দেখিবার ব্যগ্রতায় প্রায় আত্মবিস্মৃত হইয়া উঠিয়ছিল, সেই কমলা আজ লজ্জায় উঠিতে চায় না । শৈল কহিল, “দেখ পোড়ারমুখী, আমি তোকে বেশিক্ষণ সাধিব না, তা আমি বলিয়া রাখিতেছি— আমার সময় নাই- উমির ব্যামো কেবল নামমাত্র, ডাক্তার বেশিক্ষণ থাকিবে না— তোকে সাধাসাধি করিতে গিয়া মাঝে হইতে আমার দেখা হইবে না ।” এই বলিয়া কমলাকে জোর করিয়া টানিয়া লইয়া শৈলজা দ্বারের অন্তরালে আসিয়া দাড়াইল । নলিনাক্ষ উমার বুক-পিঠ ভালো করিয়া পরীক্ষা করিয়া ওষুধ লিখিয়া দিয়া চলিয়া গেল। শৈল কমলাকে কহিল, “কমল, বিধাতা তোকে যতই দুঃখ দিন, তোর ভাগ্য ভালো | এখন দুই-একদিন, বোন, তোকে একটু ধৈর্য ধরিয়া থাকিতে হইবে- আমরা একটা ব্যবস্থা করিয়া দিতেছি। ইতিমধ্যে উমির জন্যে ঘন ঘন ডাক্তারের প্রয়োজন হইবে, অতএব নিতান্ত তোকে বঞ্চিত হইতে হইবে न्ी ॥' খুড়া একদিন এমন সময় বাছিয়া ডাক্তার ডাকিতে গেলেন যখন নলিনাক্ষ বাড়িতে থাকে না। চাকর কহিল, “ডাক্তারবাবু নাই ।” খুড়া কহিলেন, “মােঠাকরুন তো আছেন, তাহাকে একবার খবর দাও । বলো একটি বৃদ্ধ ব্ৰাহ্মণ তাহার সঙ্গে দেখা করিতে চায় ।” উপরে ডাক পড়িল । খুড়া গিয়া কহিলেন, “মা, আপনার নাম কাশীতে বিখ্যাত। তাই আপনাকে দেখিয়া পুণ্যসঞ্চয় করিতে আসিলাম। আমার আর-কোনো কামনা নাই । আমার একটি দৌহিত্রীর অসুখ, আপনার ছেলেকে ডাকিতে আসিয়াছিলাম, তিনি বাড়ি নাই ; তাই মনে করিলাম। শুধু শুধু ফিরিব না, একবার আপনাকে দর্শন করিয়া যাইব ।” ক্ষেমংকরী কহিলেন, “নীলিন এখনি আসিবে, আপনি ততক্ষণ একটু বসুন । বেলা নিতান্ত কম হয় নাই, আপনার জন্য কিছু জলখাবার আনাইয়া দিই।” খুড়া কহিলেন, “আমি জানিতাম, আপনি আমাকে না খাওয়াইয়া ছাড়িবেন না— আমার যে ভোজনে বেশ-একটুখানি শখ আছে তাহা আমাকে দেখিলেই লোকে টের পায়, এবং সকলেই এ বিষয়ে আমাকে একটু দয়াও করে।” ক্ষেমংকরী খুড়াকে জল খাওয়াইয়া বড়ো খুশি হইলেন। কহিলেন, “কাল আমার এখানে আপনার মধ্যাহ্নভোজনের নিমন্ত্রণ রহিল ; আজ প্ৰস্তুত ছিলাম না, আপনাকে ভালো করিয়া খাওয়াইতে °ळ्निा न ||” খুড়া কহিলেন, “যখনই প্রস্তুত হইবেন এই ব্ৰাহ্মণকে স্মরণ করবেন। আপনাদের বাড়ি হইতে আমি বেশি দূরে থাকি না। বলেন তো আপনার চাকরিটাকে লইয়া আমার বাড়ি দেখাইয়া আসিব ।” এমনি করিয়া খুড়া দুই-চারি দিনের যাতায়াতেই নলিনাক্ষের বাড়িতে বেশ একটু জমাইয় लशलन । ক্ষেমংকরী নলিনাক্ষকে ডাকিয়া কহিলেন, “ও নলিন, তুই চক্রবর্তমশায়ের কাছ থেকে ভিজিট নির্স () (୧୩ !” কাছ হইতে উনি কিছুই নেন নাই। র্যাহারা দাতা তাহারা গরিবকে দেখিলেই চিনিতে পারেন।' দিন-দুয়েক পিতায় ও কন্যায় পরামর্শ চলিল। তাহার পরে একদিন সকালে খুড়া কমলাকে কহিল। “চলো মা, আমরা দশাশ্বমেধে স্নান করিতে যাই।” কমলা শৈলকে কহিল, “দিদি, তুমিও চলো-না।”