গোরা (?br> বরদাসুন্দরী সতীশকে কহিলেন, “সতীশ, যা তুই ঐ বারান্দায় গিয়ে একটু বােস গে। যা ।” সতীশের এই নিরানন্দ নির্বাসনদণ্ডে ব্যথিত হইয়া বিনয় তাহাকে কতকগুলা ছবির বই বাহির করিয়া দয়া পাশের ঘরে আলো জ্বালিয়া বসাইয়া দিল । বরদাসুন্দরী যখন বলিলেন ‘বিনয়, তুমি তো ব্ৰাহ্মসমাজের কাউকে জান না— আমার হাতে একখানা চিঠি লিখে দাও, আমি কাল সকালেই নিজে গিয়ে সম্পাদক মহাশয়কে দিয়ে সমস্ত বন্দোবস্ত করে দেব, যাতে পরশু রবিবারেই তোমার দীক্ষা হয়ে যায় । তোমাকে আর কিছুই ভাবতে হবে না।-- তখন বিনয় কোনো কথাই বলিতে পারিল না । সে তাহার আদেশ অনুসারে একখানি চিঠি লিখিয়া বুরদাসুন্দরীর হাতে দিয়া দিল । যাহা হউক, একটা কোনো পথে এমন করিয়া বাহির হইয়া পড়া তাঙ্গার দৱকাৱ হইয়াছিল যে, ফিরিবার বা দ্বিধা করিবার কোনো উপায়মাত্র না থাকে । ললিতার সঙ্গে বিবাহের কথাটাও বরদাসুন্দরী একটুখানি পাড়িয়া রাখিলেন । বরদাসুন্দরী চলিয়া গেলে বিনয়ের মনে ভারি একটা যেন বিতৃষ্ণা বোধ হইতে লাগিল । এমন-কি, ললিতার স্মৃতিও তাহার মনের মধ্যে কেমন একটু বেসুরে বাজিতে লাগিল । তাহার মনে হইতে লাগিল যেন বরদাসুন্দরীর এই অশোভন বাস্ততার সঙ্গে ললিতারও একটা কোথাও যোগ আছে । নিজের প্রতি শ্ৰদ্ধােহাসের সঙ্গে সঙ্গে সকলেরই প্রতি তাহার শ্রদ্ধা যেন নামিয়া পড়িতে লাগিল । ললিতা যে বিনয়কে ভালোবাসে তাহা তিনি নিশ্চয় বুঝিয়াছিলেন । সেইজন্যই তাঁহাদের বিবাহ লইয়া সমাজে যখন গোল বাধিয়াছিল, তখন তিনি নিজে ছাড়া আর সকলকেই এজন্য অপরাধী করিয়াছিলেন । ললিতার সঙ্গে কয়দিন তিনি কথাবার্তা একরকম বন্ধ করিয়া দিয়াছিলেন । সেইজন্য আক্ত যখন একটা কিনারা হইল সেটা যে অনেকটা তাহার জন্যই হইল। এই গৌরবটুকু ললিতার কাছে প্রকাশ করিয়া তাহার সঙ্গে সন্ধি স্থাপন কবিতে বাস্ত হইয়া উঠিলেন । ললিতার বাপ তো সমস্ত মাটি কবিয়াই দিয়াছিলেন । ললিতা নিজেও তো বিনয়কে সিধা করিতে পারে নাই। পানুবাবুর কাছ হইতেও তো কোনো সাহায্য পাওয়া গেল না ; একলা বরদাসুন্দৰী সমস্ত গ্ৰন্থি ছেদন করিয়াছেন । হা হা, একজন মেয়েমানুষ যাহা পারে পাঁচজন পুরুষে তাহ পারে না । বরদাসুন্দরী বাড়ি ফিরিয়া আসিয়া শুনিলেন, ললিতা আজ সকাল-সকাল শুইতে গেছে, তাহার শরীর তেমন ভালো নাই । তিনি মনে মনে হাসিয়া কহিলেন, 'শরীর ভালো করিয়া ** ' এখনো শোয় নাই, একটা কেদারায় হেলান দিয়া পডিয়া আছে ! ললিতা তৎক্ষণাৎ উঠিয়া বসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “মা, তুমি কোথায় গিয়েছিলে ?” তাহার স্বরের মধ্যে একটা তীব্ৰতা ছিল । সে খবর পাইয়াছিল তিনি সতীশকে লইয়া বিনয়ের বাসায় গিয়াছিলেন । বরদাসুন্দরী কহিলেন, “আমি বিনয়ের ওখানে গিয়েছিলেম।” "sp " কেন ! বরদাসুন্দরীর মনে মনে একটু রাগ হইল। ললিতা মনে করে আমি কেবল ওর শক্রতাই করিতেছি ! অকৃতজ্ঞ ' বরদাসুন্দরী কহিলেন, “এই দেখো কেন।” বলিয়া বিনয়ের সেই চিঠিখানা ললিতার চোখের সামনে মিলিয়া ধরিলেন । সে চিঠি পড়িয়া ললিতার মুখ লাল হইয়া উঠিল। বরদাসুন্দরী নিজের কৃতিত্ব-প্রচারের জন্য কিছু অত্যুক্তি করিয়াই জানাইলেন যে, এ চিঠি কি বিনয়ের হাত হইতে সহজে শাহর হইতে পারিত । তিনি জাক করিয়া বলিতে পারেন এ কাজ আর-কোনো লোকেরই সাধ্যের भरें छ्लि ना । ললিতা দুই হাতে মুখ ঢাকিয় তাহার কেদারায় শুইয়া পড়িল । বরদাসুন্দরী মনে করিলেন, তাহার
পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৩১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
![](http://upload.wikimedia.org/wikisource/bn/thumb/f/f5/%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A7%80%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%B0-%E0%A6%B0%E0%A6%9A%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%B2%E0%A7%80_%28%E0%A6%A4%E0%A7%83%E0%A6%A4%E0%A7%80%E0%A6%AF%E0%A6%BC_%E0%A6%96%E0%A6%A3%E0%A7%8D%E0%A6%A1%29_-_%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A6%AD_%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A7%80.pdf/page631-1024px-%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A7%80%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%B0-%E0%A6%B0%E0%A6%9A%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%B2%E0%A7%80_%28%E0%A6%A4%E0%A7%83%E0%A6%A4%E0%A7%80%E0%A6%AF%E0%A6%BC_%E0%A6%96%E0%A6%A3%E0%A7%8D%E0%A6%A1%29_-_%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A6%AD_%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A7%80.pdf.jpg)