পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গুরু Ꮌ© > আচার্য। কী যে করেছি তা বোঝবারও শক্তি আমার নেই। তবে এইটুকু বুঝি—আমি সব নষ্ট করেছি। দাদাঠাকুর । যিনি তোমাকে মুক্তি দেবেন তাকেই তুমি কেবল বঁাধবার চেষ্টা করেছ। আচার্য। কিন্তু বাধতে তো পারি নি ঠাকুর । র্তাকে বঁধেছি মনে করে যতগুলো "পাক দিয়েছি সব পাক কেবল নিজের চারদিকেই জড়িয়েছি। যে হাত দিয়ে সেই বাধন খোলা যেতে পারত সেই হাতটা সুদ্ধ বেঁধে ফেলেছি। দাদাঠাকুর । যিনি সব জায়গায় আপনি ধরা দিয়ে বসে আছেন তাকে একটা জায়গায় ধরতে গেলেই তাকে হারাতে হয় । আচার্য। আদেশ করে প্রভূ । ভুল করেছিলুম জেনেও সে ভুল ভাঙতে পারি নি । পথ হারিয়েছি তা জানতুম, যতই চলছি ততই পথ হতে কেবল বেশি দূরে গিয়ে পড়ছি তাও বুঝতে পেরেছিলুম, কিন্তু ভয়ে থামতে পারছিলুম না । এই চক্রে হাজার বার ঘুরে বেড়ানোকেই পথ খুজে পাবার উপায় বলে মনে করেছিলুম। দাদাঠাকুর । যে চক্র কেবল অভ্যাসের চক্র, যা কোনো জায়গাতেই নিয়ে যায় না, কেবল নিজের মধ্যেই ঘুরিয়ে মারে, তার থেকেই বের করে সোজা রাস্তায় বিশ্বের সকল যাত্রীর সঙ্গে দাড় করিয়ে দেবার জন্যেই আমি আজ এসেছি। আচার্য। ধন্ত করেছ ।--কিন্তু এতদিন আস নি কেন প্রভু ? আমাদের আয়তনের পাশেই এই দর্ভকপাড়ায় তুমি আনাগোনা করছ আর কত বৎসর হয়ে গেল আমাদের আর দেখা দিলে না ? দাদাঠাকুর । এদের দেখা দেওয়ার রাস্ত যে সোজা । তোমাদের সঙ্গে দেখা করা তো সহজ করে রাখ নি । পঞ্চক । ভালোই করেছি, তোমার শক্তি পরীক্ষা করে নিয়েছি। তুমি আমাদের পথ সহজ করে দেবে, কিন্তু তোমার পথ সহজ নয় । এখন, আমি ভাবছি তোমাকে ডাকব কী বলে ? দাদাঠাকুর, না গুরু ? দাদাঠাকুর । যে জানতে চায় না যে আমি তাকে চালাচ্ছি আমি তার দাদাঠাকুর, আর যে আমার আদেশ নিয়ে চলতে চায় আমি তার গুরু । পঞ্চক। প্রভু, তুমি তাহলে আমার দুইই। সুমাকে আমিই চালাচ্ছি, আর আমাকে তুমিই চালাচ্ছ এই দুটোই আমি মিশিয়ে জানতে চাই। আমি তো যুনক নই, তোমাকে মেনে চলতে ভয় নেই। তোমার মুখের আদেশকেই আনন্দে আমার মনের ইচ্ছা করে তুলতে পারব। এবার তবে তোমার সঙ্গে তোমারই বোঝা মাথায় নিয়ে বেরিয়ে পড়ি ঠাকুর।