পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অরুপ রতন >ly> কৌণ্ডিল্য। কেউ না, কেউ না । আমাদের গ্রামের যে মোড়ল, ও তার খুড়শ্বগুর— অন্য পাড়ায় বাড়ি । দ্বিতীয় পদাতিক। ই স্থা, খুড়শ্বশুর গোছের চেহারা বটে, বুদ্ধিটাও নেহাত খুড়শ্বশুরে ধাচার । কুম্ভ। অনেক দুঃখে বুদ্ধিটা এইরকম হয়েছে। এই ষে সেদিন কোথা থেকে এক রাজা বেরোল, নামের গোড়ায় তিন-শ পয়তাল্লিশটা শ্ৰী লাগিয়ে ঢাক পিটোতে পিটোতে শহর ঘুরে বেড়াল—আমি তার পিছনে কি কম ফিরেছি? কত ভোগ দিলেম কত সেবা করলেম, ভিটেমাটি বিকিয়ে যাবার জো হল । শেষকালে তার রাজগিরি রইল কোথায় ? লোকে যখন তার কাছে তালুক চায়, মুলুক চায় সে তখন পাজিপুথি খুলে শুভদিন কিছুতেই খুজে পায় না। কিন্তু আমাদের কাছে খাজনা নেবার বেলায় মঘ। অশ্লেষা ত্র্যস্পর্শ কিছুই তো বাধত না । দ্বিতীয় পদাতিক। ই হে কুম্ভ, আমাদের রাজাকে তুমি সেই রকম মেকি রাজা বলতে চাও । কুম্ভ। না বাবা, রাগ করে না। আমি নাকে খত দিচ্ছি—যতদূর সরতে বল তত দূরই সরে দাড়াব । দ্বিতীয় পদাতিক । আচ্ছা, বেশ এইখানে সার বেঁধে দাড়িয়ে থাকে । রাজা এলেন বলে—আমরা এগিয়ে গিয়ে রাস্তা ঠিক করে রাখি । [ পদাতিকদের প্রস্থান জনাৰ্দন। কুম্ভ, তোমার ওই মুখের দোষেই তুমি মরবে ! কুম্ভ । না ভাই জনাৰ্দন, ও মুখের দোষ নয়, ও কপালের দোষ । ষেবারে মিছে রাজা বেরোল একটি কথাও কই নি—অত্যন্ত ভালোমানুষের মতো নিজের সর্বনাশ করেছি—আর এবার হয়তো বা সত্যি রাজা বেরিয়েছে, তাই বেফাস কথাটা মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল । ওটা কপাল । জনাৰ্দন। আমি এই বুঝি, রাজা সত্যি হ’ক মিথ্যে হ'ক, মেনে চলতেই হবে। আমরা কি রাজা চিনি যে বিচার করব । অন্ধকারে ঢেলা মারা—ষত বেশি মারবে একটা না একটা লেগে যাবে। আমি তাই একধার থেকে গড় করে যাই—সত্যি হলে লাভ, মিথ্যে হলেই বা লোকসান কী । কুম্ভ । ঢেলাগুলো নেহাত ঢেলা হলে ভাবনা ছিল না—দামি জিনিস—বাজে খরচ করতে গিয়ে ফতুর হতে হয়। কৌতিল্য। ওই যে আসছেন রাজা । জাহী রাজার মতন রাজা বটে। কী চেহারা । যেন ননির পুতুল। কেমন হে কুম্ভ, এখন কী মনে হচ্ছে।