পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩১s রবীন্দ্র-রচনাবলী সমানে চলবে দিনের পর দিন, অতীন্দ্র বিলীন হয়ে যাবে পাণ্ডুবৰ্ণ দূরদিগন্তে। আমার ছোয়াচ লেগেছে ষে-মাড়োয়ারিকে তাকে বেড়ি-পরা মহামারীতে না পায় এই আমি কামনা করি। এখনও বিনা মূলধনে আমার ভাগ্যভাগী হবার সম্ভাবনা যে তার নেই তা বলতে পারি নে ৷” * இ. “তোমার ভবিষ্যৎ ঠিকানাটা ?” “ছকুম নেই বলবার।” “তাহলে কি কল্পনাও করতে পারব না তুমি আছ কোথায় ?” “কল্পনা করতে দোষ কী। মানস সরোবরের তীরটা ভালো জায়গা " . ইতিমধ্যে ঝুলির ভিতর থেকে বইগুলো বের করে এলা উলটেপালটে দেখছে। কাব্য, তার কিছু ইংরেজি, আর দুই-একখানা বাংলা । অতীন বললে, “এতদিন ওগুলো বয়ে বেড়িয়েছি পাছে নিজের জাত ভুলি। • ওরই বাণীলোকে ছিল আমার আদি বসতি। পাতা খুললেই পেনসিলে চিহ্নিত তার রাস্তাগলির নির্দেশ পাবে। আর আজ ! এই দেখো চেয়ে ।” এলা হঠাৎ মাটিতে লুটিয়ে অতীনের পা জড়িয়ে ধরলে। বললে, “মাপ করে, অন্ত, আমাকে মাপ করে ।” “তোমাকে মাপ করবার কী আছে এলী ? ভগবান যদি থাকেন, তার যদি অসীম দয়া তবে তিনি যেন আমাকে মাপ করেন ।” پس “যখন তোমাকে চিনতুম না তখন তোমাকে এই রাস্তায় দাড় করিয়েছি।” অতীন হেসে উঠে বললে, “নিজেরই পাগলামির ফুল স্টমে এই অস্থানে পৌছেছি সে-খ্যাতিটুকুও দেবে না আমাকে ? আমাকে নাবালকের কোঠায় ফেলে অভিভাবকগিরি করতে এলে আমি সইব না বলে রাখছি। তার চেয়ে মঞ্চ থেকে নেবে এস ; আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলো—এস এস বঁধু এস আধো আঁচরে বসে।” “হয়তো বলতুম কিন্তু আজ তুমি এমন করে খেপে উঠলে কেন ?” “খেপব না ? বললে কিনা ভূজমৃণালের জোরে তুমি আমাকে পথে বের করেছ।” *সত্যি কথা বললে রাগ কর কেন ?” “সত্যি কথা হল ? আমি ছিটকে পড়েছি রাস্তায় অন্তরের বেগে, তুমি উপলক্ষ্যমাত্র। অন্য কোনো শ্রেণীর বঙ্গমহিলাকে উপলক্ষ্য পেলে এতদিনে গোরা-কাল-সন্মিলনী ক্লাবে ব্রিজ খেলতে যেভূম, ঘোড়দৌড়ের মাঠে গবর্নরের বন্মের অভিমুখে স্বৰ্গারোহণপর্বের সাধন করতুম। যদি প্রমাণ হয় আমি মূঢ় তবে জাক করে বলব সে মূঢ়তা স্বয়ং আমারই, যাকে বলে ভগবদত্ত প্রতিভা ।”